এমডির পুনর্নিয়োগ ও জলাবদ্ধতা

মন্ত্রী আসেন, মন্ত্রী যান, কিন্তু তিনি স্বপদে বহাল থাকেন। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এ পর্যন্ত দুজন মন্ত্রী বিদায় নিয়েছেন। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। বর্তমানে দায়িত্বে আছেন তাজুল ইসলাম। কিন্তু ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পদে তাকসিম এ খান ১১ বছর ধরেই আছেন। কীভাবে এটি সম্ভব হলো?

ঢাকা ওয়াসা একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। সরকারি নিয়ম মেনেই এ প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে কাউকে নিয়োগ দিতে হয়। কিন্তু তাকসিম এ খানকে নিয়োগ দিতে একাধিকবার শুধু নিয়মেরই ব্যত্যয় ঘটানো হয়নি, ছলচাতুরীরও আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। কখনো বয়সের সীমা বাড়িয়ে, কখনো পরিচালনা পর্ষদকে পাশ কাটিয়ে তাঁকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ওয়াসা কি এভাবেই চলবে?

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত সোমবার এক বিবৃতিতে ঢাকা ওয়াসায় দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সব ধরনের চুক্তিভিত্তিক পদে নিয়োগে আইনের যথাযথ অনুসরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। চলতি বছরের ১৪ অক্টোবর ওয়াসার বর্তমান এমডির মেয়াদ শেষ হবে। এর আগে সংশ্লিষ্ট খাতে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যোগ্য ও অভিজ্ঞ নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ করার কথাও বলেছে তারা।

যে ব্যক্তিকে ১১ বছর ধরে একই পদে রাখা হয়েছে, তাঁর সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ানটি একবার দেখা দরকার। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ঢাকা মহানগরের জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজে ঢাকা ওয়াসা অন্তত ১০০ কোটি টাকা খরচ করেছে। কিন্তু ফলাফল যে শূন্য, ঢাকাবাসী গত দুদিনের বৃষ্টিতেই তা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। আগে বৃষ্টিতে হাঁটুপানি হতো, এখন গলাপানি হচ্ছে। গতকাল প্রথম আলোয় ‘মুখের বুলি আর টাকার শ্রাদ্ধ’ শিরোনামে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, তাতে দেখা যায়, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জনসেবার নামে ঢাকা ওয়াসা শত শত কোটি টাকা খরচ করেছে, কিন্তু তার ফলে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমেনি। ওয়াসার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব নগরবাসীকে সুপেয় পানি দেওয়া, সে দায়িত্বও তারা পালন করতে পারেনি। ওয়াসার পানিতে রোগজীবাণু ও ময়লা থাকে; তা না ফুটিয়ে খাওয়ার কোনো উপায় নেই। এমডি একবার ওয়াসার পানি শতভাগ বিশুদ্ধ বলে দাবি করেছিলেন। এরপর নাগরিকেরা যখন তাঁর প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন, তখন তিনি পিছু হটেন। ঢাকার ভরাট ও দখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধারে গত এক দশকে কোনো কাজ হয়নি। 

ঢাকা ওয়াসার বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানসহ দুই প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুর্নীতি দমন কমিশন গত বছর যে উদ্যোগ নিয়েছিল, সেটিও মাঝপথে থেমে গেছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার কথা ছিল ১৫ দিনের মধ্যে, অথচ ১১ মাসেও তারা প্রতিবেদন দিতে পারেনি। প্রতিবেদন দিতে না পারায় দুদকের তদন্তকাজও থেমে আছে। ২০১০ সালে ওয়াসা পানি, স্যুয়ারেজ ও পানিনিষ্কাশন নিয়ে যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল, তা পরিকল্পনাতেই আটকে আছে। 

এই প্রেক্ষাপটে টিআইবির বিবৃতিটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সরকার যদি সেবাপ্রতিষ্ঠানগুলোর ন্যূনতম স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতে বিশ্বাস করে, তাহলে তারা একজন ব্যর্থ ব্যক্তিকে একই পদে বারবার নিয়োগ দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।