মাগুরায় সালিসের জুলুম

গ্রামসমাজের দায়িত্ব হলো, কেউ অন্যায়ের শিকার হলে তার পাশে দাঁড়ানো এবং অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। কিন্তু মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলার হাটা ইউনিয়নে সালিসের নামে তথাকথিত সমাজপতিরা আক্রান্ত পরিবারকেই দোষী সাব্যস্ত করে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য এবং পুরো পরিবারটিকে ছয় মাসের জন্য সমাজচ্যুত করার অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন। আর অন্যায্য সালিসে নেতৃত্ব দিয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সিদ্দিকি ও সাবেক ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান।

প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, ১৬ জুলাই অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে তার পরিবার থানায় মামলা দায়ের করে মাগুরা সদর উপজেলার বেরাইল পালিতা ইউনিয়নের শাহাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে প্রাথমিক দায়িত্ব পালন করেছে। এর আগে ধর্ষণের শিকার পরিবারের পক্ষ থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা সিদ্দিকির কাছে প্রতিকারের জন্য গেলে দুই দিন পর তিনি সালিস বসান এবং বিয়ের আগে মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা হয়েছে, এই অভিযোগে তাদের ওপর অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেন। 

শুধু তা–ই নয়, পরিবারটি জরিমানা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বাড়ির গরু, ছাগল, মুরগি, সেচযন্ত্র, ভ্যান, বাইসাইকেল ইত্যাদি ছিনিয়ে নিয়ে যান। পরে অবশ্য পুলিশ এসব মালামাল উদ্ধার করে পরিবারটিকে ফিরিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় ভুক্তভোগী পরিবারটির মানসিক অবস্থা কী হতে পারে, অনুমান করা কঠিন নয়। 

শুধু মাগুরা নয়, সালিসের নামে সারা দেশের গ্রামাঞ্চলে এ রকম জবরদস্তির ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে। কোনো সভ্য দেশে কেউ আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে না। পুলিশ মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার এবং ছিনিয়ে নেওয়া মালামাল উদ্ধার করেছে, এ জন্য তারা ধন্যবাদ পেতে পারে। কিন্তু যাঁরা ভুক্তভোগী পরিবারের ওপর অন্যায় সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলেন, তাঁরা কোনোভাবেই পার পেতে পারেন না। মঙ্গলবার সালিসে অংশগ্রহণকারী তিনজনকে পুলিশ আটক করলেও নেতৃস্থানীয় কেউ গ্রেপ্তার হননি। অবিলম্বে তাঁদের আইনের আওতায় আনা হোক।

সর্বোপরি ভুক্তভোগী পরিবারটিকে যেমন আইনি সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন, তেমনি তাদের সামাজিক স্বস্তিও প্রয়োজন। বিশেষ করে ধর্ষণের শিকার মেয়েটির যেন কোনোভাবেই মনে না হয় যে তার দোষ হয়েছে। বরং তাকে এটাই বোঝাতে হবে যে সে অন্যায়ের শিকার হয়েছে এবং পরিবার ও সমাজের সবাই তার পাশে আছে। মেয়েটির মানসিক ও শারীরিক শুশ্রূষাও জরুরি।