ঈদে বাড়তি সতর্কতা

আর সপ্তাহখানেক পরেই বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্‌যাপিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু কোভিড–১৯ মহামারিতে সারা দেশ এবং দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় দেশের বেশ কিছু অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবনে দুর্ভোগ চলছে। তা সত্ত্বেও ঈদের সময়টা ভালোভাবে কাটুক, এটা সাধারণ প্রত্যাশা। তবে পরিস্থিতি যখন স্বাভাবিক নয়, তখন কোভিড–১৯ সংক্রমণ এড়ানোর লক্ষ্যে বাড়তি সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা অবশ্যই প্রয়োজন। 

গতকাল দুপুর পর্যন্ত সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে কোভিড–১৯–এ আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ২৫৪। এ রোগে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৭৫১ জন। প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়ে প্রায় ৩ হাজার করে নতুন রোগী যোগ হচ্ছেন। গত সপ্তাহে সংক্রমণের গড় হার জুন মাসের শেষের তুলনায় বেড়েছে। 

সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা দীর্ঘায়িত হচ্ছে, যদিও বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলেছিলেন জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহের দিকে সংক্রমণ নিম্নমুখী হতে শুরু করতে পারে। এ রকম প্রত্যাশা জেগেছিল সাধারণ ছুটি, লকডাউন এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্বের নিয়মগুলো মেনে চলার ক্ষেত্রে অধিকতর মনোযোগের পরিপ্রেক্ষিতে। কিন্তু মে মাসে সাধারণ ছুটি শেষ এবং জুনের শুরু থেকেই লকডাউন উঠে যাওয়া এবং সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে শৈথিল্যের কারণে সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী ধারাই চলছে। 

এ পরিস্থিতিতে ঈদুল আজহা চলে এল। সরকার প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ঈদুল আজহার আগে ও পরে মোট ৯ দিন গণপরিবহন বন্ধ রাখা হবে। যে ব্যক্তি যে স্থানে অবস্থান করছেন, তিনি সেখানেই ঈদ উদ্‌যাপন করবেন। কিন্তু সরকার শেষ পর্যন্ত ঈদের সময় গণপরিবহন চালু রাখার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে এবং তার ফলে মানুষের চলাচলে আর কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকছে না। কিন্তু সরকার কোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেনি বলে নাগরিকদের নিজেদের স্বার্থে নিজ নিজ দায়িত্বে চলাচল সীমিত রাখা এবং সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখায় কোনো বাধা নেই। প্রকৃতপক্ষে নিজেদের স্বাস্থ্য ও জীবনের সুরক্ষার বিষয়টি এখন নাগরিকদের নিজের সতর্কতা ও দায়িত্ববোধের ওপরই অনেকাংশে নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে।

সে জন্য যিনি যে স্থানে অবস্থান করছেন, তিনি সেখানেই ঈদুল আজহা উদ্‌যাপনের চেষ্টা করুন—সব নাগরিকের প্রতি আমরা এ আহ্বান জানাই। বিশেষত যাঁরা ঢাকাসহ সর্বাধিক সংক্রমিত এলাকাগুলোতে রয়েছেন। এভাবে নিজেদের ঝুঁকিমুক্ত রাখার পাশাপাশি অন্যদের সংক্রমণের আশঙ্কা কমবে। দ্বিতীয়ত, গণপরিবহন ব্যবহারের সময় অনিবার্যভাবে মাস্ক ব্যবহার করা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে শিথিলতা অতি মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ হবে। 

গণপরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বহন করা হবে না—এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব মালিক ও তাঁদের সংগঠনগুলোর। এ ক্ষেত্রে সরকারের নজরদারিও প্রয়োজন। গণপরিবহনের টিকিট সংগ্রহ করার সময় ভিড় এড়ানোও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তৃতীয়ত, কোরবানির পশু কেনাবেচার কাজটি অনলাইনে সারার চেষ্টা করা শ্রেয়। সশরীরে পশুর হাটে গিয়ে পশু কেনা এড়ানো সম্ভব হলে সবার সেই চেষ্টাই করা উচিত। যাঁদের পক্ষে তা সম্ভব হবে না, তাঁরা পশুর হাটে গিয়ে ভিড় এড়ানো, মাস্ক ব্যবহার ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে যত দ্রুত সম্ভব পশু কেনাবেচার কাজ সেরে ঘরে ফিরবেন। পশু কোরবানির সময়ও শারীরিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা একান্ত জরুরি। ঈদের জামাতে নামাজ আদায় এবং আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপনের সময়ও শারীরিক সংস্পর্শ এড়ানোর বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

কোভিড-১৯ অত্যন্ত ছোঁয়াচে সংক্রামক রোগ—এই বৈজ্ঞানিক সত্যের কোনো হেরফের ঘটেনি। সুতরাং সংক্রমণ এড়ানোর জন্য মানুষে মানুষে সংস্পর্শ এড়ানো, শারীরিক দূরত্ব ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই। ঈদ উৎসবের সময় এটা বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার।