শ্রমিকদের বেতন-বোনাস

গতবার শুধু নয়, বহুবারের মতো এবারও ঈদের আগে মজুরি-বেতন-বোনাস পাননি অনেক শ্রমিক। ঈদের আগে বোনাস তো দূরের কথা, জুন মাসের বেতনই হয়নি শ্রমিকদের বিরাট অংশের। যথারীতি বেতন-বোনাস বকেয়া কিংবা অপরিশোধের বেলায় এগিয়ে আছে পোশাকশিল্প খাত। এ যেন বঞ্চনার এক চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত।

পবিত্র ঈদুল আজহার আগে মজুরি দেওয়ার সময়সীমা সরকার ও সংশ্লিষ্ট খাতের নেতৃত্বের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়েছে। পোশাকশিল্পের জন্য ২৭ জুলাই এবং অন্যান্য খাতের জন্য ২৫ জুলাই মজুরি-বোনাস দেওয়ার নির্ধারিত সীমা। শ্রম মন্ত্রণালয়ের সভায় এ সিদ্ধান্ত হলেও বাস্তবায়ন নিয়ে রয়ে গেছে গুরুতর শঙ্কা। প্রথম আলোর মঙ্গলবারের সংবাদ জানাচ্ছে, চলতি মাসের তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও এক হাজারের বেশি তৈরি পোশাক কারখানা শ্রমিকদের গত জুনের মজুরি দেয়নি। আবার আগামী মাসের প্রথম দিন পবিত্র ঈদুল আজহা। অবস্থা দেখে মনে হয়, বরাবরের মতো এবারও ঈদের আগে সব পোশাকশ্রমিকের মজুরি ও বোনাস পাওয়া অনিশ্চিত। আর ঈদের পর বকেয়া পরিশোধের দৃষ্টান্তও বিরল। 

শিল্প পুলিশ জানাচ্ছে, সাভার-আশুলিয়া, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা, কুষ্টিয়া ও যশোরে ৭ হাজার ৬০২টি শিল্পকারখানার মধ্যে গত রোববার পর্যন্ত ২ হাজার ২৯০টি জুনের মজুরি দেয়নি, যার অর্ধেকই পোশাক ও বস্ত্র খাতের কারখানা। ঢাকা মহানগরীতে কত ভাগ কারখানার বেতন-বোনাস দেওয়া হয়নি, সেই তথ্য এখানে নেই। 

কোভিড–১৯ পরিস্থিতির কারণে পোশাকশিল্পের মালিকদের ব্যবসা চালিয়ে চাওয়ার স্বার্থে সরকার ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর শর্ত ছিল, শ্রমিকদের প্রাপ্য পরিশোধ। এদিকে পোশাক রপ্তানি আবার চাঙা হলেও ইতিমধ্যে ছাঁটাই হয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। গত এপ্রিলে কারখানা বন্ধের সময় মালিকেরা ৬৫ শতাংশ মজুরি দিয়েছেন। এমনকি শ্রমিকের ঈদ বোনাসেও হাত দিয়েছেন অধিকাংশ মালিক। তারপরও অনেকেই এবারও শ্রমিককে বঞ্চিত করবেন কোন যুক্তিতে? 

কোভিড–১৯ মহামারির মধ্যেও পোশাক খাতের শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। খাতটি সচল রয়েছে শ্রমিকের আত্মত্যাগে। এর কোনো প্রতিদান না দেওয়া চরম নির্দয়তা। এই নির্দয়তার শিকারই তাঁরা প্রতিবছর হন। করোনাকালে সময়মতো বেতন ও বোনাস না পাওয়া হবে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। একমাত্র সরকার কঠোর হলেই এর একটা সুরাহা হয়। শ্রমিকদের ন্যায্য দাবি যেন আবারও অরণ্যে রোদন হয়ে না দাঁড়ায়।