বিমানবন্দরের বর্ধিত ফি

করোনার কারণে যখন আকাশপথে বিমান চলাচল ও যাত্রীসংখ্যা অনেক কমে গেছে, তখন দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সব বিমানবন্দরে যাত্রীদের কাছ থেকে নিরাপত্তা ও বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে।

বেবিচক অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রীদের প্রতিবার ভ্রমণের জন্য উন্নয়ন ফি ১০০ টাকা ও যাত্রী নিরাপত্তা ফি ৭০ টাকা ধার্য করেছে। অন্যদিকে সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য প্রতিবার যাত্রীদের উন্নয়ন ফি ৫ ডলার ও যাত্রী-নিরাপত্তা ফি ৬ ডলার দিতে হবে। অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে বিমানবন্দর উন্নয়ন ফি ও নিরাপত্তা ফি হবে ১০ ডলার করে মোট ২০ ডলার।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলেছে, এতে বিমানবন্দরের আয় বাড়বে। যাত্রীদের ওপর যেকোনো ফি বা মাশুল ধার্য করলে আয় বাড়বে সেটি তো জানা কথা। প্রশ্ন হলো সেই মাশুল কাদের ওপর চাপবে? এর ফলে নিশ্চিতভাবেই টিকিটের দাম বেড়ে যাবে। করোনার কারণে বিমানে যাত্রী চলাচল একেবারে কমে গেছে। বিশেষ করে দেশি-বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা শূন্যে নেমে এসেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে যাত্রীদের সংখ্যাও স্বল্প। বাংলাদেশে এমনিতেই পর্যটক আসে কম, তার ওপর এ বাড়তি ফি আরোপ করা হলে পর্যটকেরা নিরুৎসাহিত হবেন।

যাত্রীদের কাছ থেকে বাড়তি ফি নেওয়া হলে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছে বিমান পরিবহন সংস্থাগুলো। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ রুটে যখন যাত্রী বাড়তির দিকে, তখন এ সিদ্ধান্ত সঠিক নয় বলে মনে করেন তাঁরা।

আন্তর্জাতিক রুটে এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ যাত্রী প্রবাসী শ্রমিক, যঁারা ছুটিতে দেশে এসে করোনার কারণে আটকা পড়েছিলেন। গত মাসে বিমান চলাচল শুরু হওয়ার পর অনেক প্রবাসী শ্রমিক কর্মস্থলে ফিরে গেছেন। বাকিরা যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এ মুহূর্তে প্রত্যেক বিমানযাত্রীকে করোনা পরীক্ষার জন্য সাড়ে তিন থেকে সাড়ে চার হাজার টাকা পকেট থেকে গুনতে হচ্ছে, গত কয়েক মাসে যাঁদের কোনো উপার্জন ছিল না। এর ওপর বিমানবন্দরের উন্নয়ন ও যাত্রীদের নিরাপত্তার নামে তাঁদের আরও ২০ ডলার মাশুল দিতে হবে। এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার দাবি রাখে।

বিমানবন্দরের উন্নয়ন হোক, যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক—সেটি সবারই কাম্য। কিন্তু করোনাকালে বিপন্ন প্রবাসী শ্রমিকদের ওপর বাড়তি মাশুল না চাপিয়ে আয়ের বিকল্প উপায়ই খুঁজতে হবে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে।