'ডিজিজ এক্স', খুলনার বাদুড় ও আগামীর মহামারি

বাংলাদেশি বাদুড়। ঢাকার রমনা পার্কের গাছে ঝুলে থাকা বাদুড়। ছবি: জাহিদুল করিম, প্রথম আলো
বাংলাদেশি বাদুড়। ঢাকার রমনা পার্কের গাছে ঝুলে থাকা বাদুড়। ছবি: জাহিদুল করিম, প্রথম আলো

সূর্য ওঠার অনেক আগেই ল্যান্ডরোভার সবাইকে হোটেল থেকে তুলে নিয়েছে। গাড়ির যাত্রী আন্তর্জাতিক সংস্থা ইকো হেলথ অ্যালায়েন্সের বিশেষজ্ঞ আমেরিকান তরুণ জনাথন ইপস্টেইন। আছেন জিম ডেসমন্ড—আরেক আমেরিকান বিশেষজ্ঞ। তৃতীয় জন গাড়ির একমাত্র বাঙালি যাত্রী, একজন ভেটেরিনারি টেকনিশিয়ান। বাংলাদেশে অনেক তরুণ ভেটেরিনারিয়ান আজকাল পশ্চিমা বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ওয়াইল্ডলাইফ নিয়ে কাজ করছেন, গবেষণা করছেন।

গাড়ির চতুর্থ যাত্রী হচ্ছেন জিম কুয়াম্যান—বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানলেখক। তাঁর প্রকাশিতব্য বই ‘স্পিলওভার’ লেখার জন্য জনাথন ইপস্টেইনকে বলেকয়ে সাথি হয়েছেন এবার। ডেসমন্ড আর কুয়াম্যানের জন্য বাংলাদেশ প্রথম ফিল্ড ওয়ার্ক। স্পিলওভার বইটার কয়েকটা অধ্যায় বাংলাদেশের পটভূমিকায় লেখা। জিম কুয়াম্যান তাঁর ‘স্পিলওভার’ বইটিতে এই মাঠ সফরগুলোর সুন্দর বর্ণনা দিয়েছেন।

খুলনার বাদুড় ও জনাথন ইপস্টেইন

জোনাথন ইপস্টেইন
জোনাথন ইপস্টেইন

ঢাকা থেকে বের হয়ে দক্ষিণ মুখে ছুটে চললেন তাঁরা। ইপস্টেইন থাকেন নিউইয়র্কে কিন্তু পাঁচ বছর ধরে প্রতিবছর কয়েকবার করে বাংলাদেশে আসা হয় তাঁর। পথঘাট নিয়মকানুন, লোকজন সবই চেনা। সকাল নয়টার দিকে ফরিদপুরে থামা—নাশতা করা আর আরও দুজনকে তুলে নেওয়া। এই দুজন হলেন ফরিদপুরের পিটু মিয়া আর গফুর শেখ। আজকের ফিল্ডওয়ার্ক পিটু আর গফুর ছাড়া কঠিন বে। ল্যান্ডরোভার ছুটে চলল দক্ষিণ বাংলার দিকে। রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর, সাতক্ষীরা, খুলনা। যা খুঁজছেন তা ঠিকমতো মিলছে না। খুলনা-যশোর-সাতক্ষীরা সারা দিন ঘুরে আবার খুলনায় ফেরা। একটা সুবিধামতো জায়গা পাওয়া গেছে: খুলনা বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়ালঘেরা একটা পরিত্যক্ত গুদাম। এই গুদামের পেছনে কয়েকটা বিশাল কড়ইগাছে ঝুলছে কয়েক হাজার বাদুড়।

২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯১৮-এর স্প্যানিশ ফ্লুর মতো একটা সম্ভাব্য বিশ্বব্যাপী অতিমারি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিতে থাকে। এই সম্ভাব্য অতিমারির নাম দেওয়া হয় ‘ডিজিজ এক্স’ (disease X)। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে সম্ভাব্য ভাইরাস খোঁজার কাজ শুরু হয় অবশ্য আরও অনেক আগে। ২০০১ সালের সার্স-১ মহামারির পরপরই। ভাইরোলজিস্ট আর এপিডেমিওলোজিস্টরা অনেক দিন ধরেই আশঙ্কা করছেন; ১০০ বছর হয়ে গেছে, স্প্যানিশ ফ্লু ধরনের আরেকটা বৈশ্বিক মহামারি আসন্ন!

ডিজিজ এক্স ও বাংলাদেশ
বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এই মহামারি ঘটাবে হয়তোবা নতুন একটা ফ্লু ভাইরাস বা করোনাভাইরাস, যা সম্ভবত বাদুড় থেকে মানুষে সংক্রমিত হবে! এই ধারণা থেকে বিজ্ঞানীরা বাদুড় তাড়া করেছেন গুহা থেকে গুহায়। বাদুড়ে সংক্রমিত ভাইরাস বিচ্ছিন্ন করে তার জিন সিকুয়েন্সিং করছেন, ক্যাটালগ করছেন, প্রকাশ করেছেন। এই লড়াইয়ে নেতৃত্বে দিচ্ছিলেন উহান ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের প্রধান করোনাভাইরাস বিজ্ঞানী ‘ব্যাটওম্যান’ নামে খ্যাত শি ঝং-লি আর সিঙ্গাপুরের ‘ব্যাটম্যান’ বা বাদুড়মানব লিনফা ওয়াং! তাঁদের সহযোগিতা করছেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ইকো হেলথ অ্যালায়েন্সের পিটার ডাসাক, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ান লিপকিন প্রমুখ। এই করোনাভাইরাস/ফ্লু ভাইরাস খোঁজা চলেছে মূলত দক্ষিণ চায়না, লাওস আর ভিয়েতনামের সীমান্ত অঞ্চলের গুহাগুলোতে।

ব্যাটম্যান নামে খ্যাত অধ্যাপক ওয়াং লিনফা ছবি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সৌজন্যে
ব্যাটম্যান নামে খ্যাত অধ্যাপক ওয়াং লিনফা ছবি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সৌজন্যে

‘ডিজিজ এক্স’ ঘটবে যে ভাইরাসের বিস্তারের ফলে; সেই ভাইরাস খোঁজার দ্বিতীয় আস্তানা কিন্তু হবে খুব অস্বাভাবিক কোনো জায়গা থেকে। গহিন কোনো জঙ্গল না, অন্ধকার কোনো গুহা না। দ্বিতীয় আস্তানা হতে পারে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ কোনো জায়গা—যেমন বাংলাদেশ! যেহেতু বাংলাদেশের ভেতর থেকে কোনো শি ঝং-লি বা লিনফা ওয়াং উঠে আসছে না, সেহেতু এখানে বাদুড় আর বাদুড়ের ভাইরাস খোঁজার কাজটা নিজেরাই করছেন পিটার ডাসাক ও তাঁর দল।

পৃথিবীর সম্ভাব্য সংক্রমণ নিয়ে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের অস্বস্তিতে রেখেছে আরেকটা ভাইরাস—নিপাহ ভাইরাস। ভাইরোলজিস্টদের কাছে বাদুড় থেকে মানুষের মধ্যে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ খুব একটা ভালো ঠেকছে না। বড় ভূমিকম্পের আগে অনেক হুঁশিয়ারিমূলক কম্পন বা ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়। ছোট ভূমিকম্পগুলো বিশাল কিছুর অশনিসংকেত। এখন বছর বছর বাদুড় থেকে মানুষে ভাইরাসটা আসছে এবং সেই মানুষ আরও কিছু মানুষকে সংক্রমিত করে দিচ্ছে। তারপর ধুম করে এর বিস্তার থেমে যাচ্ছে। ঠিক ২০০১ সালের সার্স-১-এর মতো। এই নিপাহ ভাইরাসটা যদি অভিযোজন করে কোভিডের মতো সংক্রামক হয়ে যায়, তার পরিণতির কথা মহামারি বিশেষজ্ঞরা চিন্তা করতেও ভয় পান। নিপাহ ভাইরাসে মৃত্যুর হার ৫০ থেকে ৯০ ভাগের মতো। একটা নিপাহ মহামারি শুরু হয়ে গেলে বাংলাদেশ থেকে শুরু করে পৃথিবীতে কোটি কোটি মানুষ মারা যেতে পারে, যার কাছে হয়তো কোভিড-১৯ নিতান্তই ছেলেখেলা মনে হতে পারে।

এই শঙ্কা থেকে জনাথন ইপস্টেইন বারবার বাংলাদেশে ফিরে আসেন, ব্যয় করলেন তাঁর জীবনের স্বর্ণালি তারুণ্যের কাল—দক্ষিণবঙ্গের গ্রামে গ্রামে বাদুড় খুঁজে, ভাইরাস খুঁজে।

বাদুড়ের কলোনিতে পিটু মিয়া ও গফুর শেখ
ইপস্টেইন খুলনা বিদ্যুৎ বিভাগের পরিত্যক্ত ডিপোর ভেতর কড়াইগাছে পেয়েছেন বাদুড়ের কলোনি। পিটু মিয়া আর গফুর শেখ আগের জীবনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ময়না পাখিসহ অন্যান্য গায়ক পাখি ধরতেন চোরাচালানের উদ্দেশ্যে। এখন তাঁরা জন ইপস্টেইনের গবেষণার জন্য কাজ করেন। পিটু আর গফুর দুটো উঁচু বাঁশ কিনে এনে গাছের সামনে লাগালেন। একটা বড় মাছ ধরার জালের মতো নেট লাগিয়ে দেখলেন কেমন কাজ করে। তারপর সবাই খুলনা শহরে হোটেলে চলে গেলেন। সারা দিনের ধকলের পর একটু বিশ্রাম। কিন্তু সবাই ঘড়িতে অ্যালার্ম দিলেন রাত ১২টার। মাঝরাতের পর সবাই আবার ডিপোর পেছনের ওই কড়ইতলায়। টর্চ ফেলে দেখা গেল দিনে ঝুলে থাকা বাদুড়েরা সবাই গেছে খাবারের সন্ধানে। পিটু আর গফুর দ্রুত গাছ বেয়ে উঠে বাঁশের গায়ে জাল লাগিয়ে দিলেন। বাকিরা ডিপো ভবনের ছাদে।

অমাবস্যার ঘুটঘুটে অন্ধকারে চলল অপেক্ষার পালা। বাদুড়গুলো রাত শেষে ফিরে এলে জালে আটকা পড়বে। তখন ইপস্টেইন ঝাঁপিয়ে বাদুড় ধরে বেঁধে ফেলবেন আর ডেসমন্ড খাঁচায় ভরবেন। সারা রাত ধরে চলবে এই কাজ। পরদিন সকালে জন, ভিনসেন্ট আর আরিফ এই বাদুড়গুলো থেকে রক্ত, শরীরের বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহ করবেন যত্ন করে এবং জন প্রতিটা বাদুড় একে একে ছেড়ে দেবেন। জন ইপস্টেইন পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশের গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে এই কাজ করছেন। ওদের এই কাজের বাংলাদেশের অংশীদার আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা আইসিডিডিআরবি। স্টিফেন লুবি ওদের বড় সহযোগী। এরা বাদুড়ের ভাইরাস খুঁজছেন, যা হয়তো পরবর্তী বৈশ্বিক মহামারির কারণ হতে পারে।

পৃথিবীখ্যাত আসন্ন সংক্রমণের বিষয়ে যাঁরা পথিকৃৎ, তাঁদের গবেষণার বড় একটা অংশ জুড়ে রয়েছে বাংলাদেশের বাদুড় আর ভাইরাসের ওপর ফিল্ডওয়ার্কের রিপোর্ট। ইয়ান লিপকিন আর পিটার ডাসাকদের সাম্প্রতিক একটা অনুসন্ধান হচ্ছে, বাংলাদেশের বাদুড়ের রক্তে ভয়ংকর জায়ার ইবোলা ভাইরাসের অ্যান্টিবডি পাওয়া। মানে বাংলাদেশের বাদুড় ও অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণীরা ইবোলা ভাইরাস দিয়ে আক্রান্ত, অথবা এখন এই ভাইরাস তারা বহন করছে। তাই বাংলাদেশে কোনো দিন ইবোলা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিলে বিজ্ঞানীরা অবাক হবেন না।

সিঙ্গাপুর সম্মেলনে ‘ব্যাটম্যানে’র আশঙ্কা
২০১৯ সালে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি যখন সবার অজান্তে উহানে একটা নূতন করোনাভাইরাস মানুষকে আক্রান্ত করে ফেলছে, সেই সময় সিঙ্গাপুরে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভাইরোলজি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। কোভিড ভাইরাসের যিনি আবিষ্কর্তা সেই উহান ভাইরোলজি ইনস্টিটিউটের শি ঝং-লি ছিলেন ওই সম্মেলনে। ছিলেন পৃথিবীর আসন্ন সংক্রমণ বিষয়ের রথী-মহারথীরা। ছিলেন বিল ও মেলিন্ডা গেইটস! ‘ব্যাটম্যান’ বলে খ্যাত সিঙ্গাপুরের ওয়াং লিনফা ছিলেন এই সম্মেলনের উদ্যোক্তা।

সম্মেলনের নাম ছিল নিপাহ ভাইরাস সামিট। কনফারেন্সের কার্যসূচি দেখলে জানা যায় যে আলোচনা ও প্রেজেন্টেশনের বড় অংশ জুড়ে ছিল ‘ডিজিজ-এক্স’-এর প্রস্তুতি। ভ্যাকসিনের জন্য প্রস্তুতি। কিন্তু কেউই জানতেন না এক মাসের মধ্যেই তাঁদের ওই কাজ বাস্তব জীবনে করতে হবে সত্যিকারের ‘ডিজিজ-এক্স’-এর জন্য। কেউ না জানলেও অনেকেরই এ ব্যাপারে জোরদার অনুমান ছিল। ওই সম্মেলনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইকো হেলথ অ্যালায়েন্সের প্রধান, পিটার ডাসাক বলেছিলেন, ‘আমরা সার্স-সম্পর্কিত করোনা ভাইরাসের সন্ধান পেয়েছি...পরিষ্কারভাবে এটা বর্তমান হুমকি...আমার বিশ্বাস সব সময়ই ছোট মাত্রার সংক্রমণ ঘটতেই থাকবে...এসব ভাইরাসের যেকোনোটিই মহামারি হয়ে উঠতে পারে।’

সম্ভাব্য নতুন ভাইরাসের যে জলবিভাজিকা তার একেবারে প্রান্তিক অংশে আছেন বাংলাদেশের মানুষ। ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে মানুষ ও বাদুড়ের সংস্পর্শবিহীন অবস্থা রাখতে হলে বন-বাদাড় উজাড় করে বাদুড়ের বসতি ধ্বংস করলে হবে না। বন-বাদাড় ও প্রাকৃতিক নির্জনতা নষ্ট করলে বাদুড়েরা মানুষের বসতিতে চলে আসবে।

গত কয়েক যুগে স্পিলওভার বা ভাইরাসের বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গিয়েছে। কিছুদিন পরপরই নতুন স্পিলওভারের কারণে রোগের বিস্তার ঘটছে। এর মূল কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং গাছপালা ও বন উজাড়। প্রকৃতি আর মানুষের মধ্যে সংঘাত বেড়ে চলছে। প্রকৃতি, এর বনভূমি, এর বাদুড় প্রজাতি, বাগডাঁস—আমাদের মতো এ দেশটা এদেরও। এ দেশে সবার জন্য আহার, বাসস্থান নিশ্চিত করতে হবে। বাদুড় প্রজাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে আমরা মানুষ প্রজাতি টিকতে পারব না। এ কথাটা সবার মনে থাকা দরকার!

ভিড়ের কাছে বাংলায় বলা ইপস্টেইনের আকুতি
জনাথন ইপস্টেইন সারা রাত, সারা সকাল ফিল্ডওয়ার্ক করে, নমুনা সংগ্রহ করে বাদুড়গুলো যখন একে একে ছেড়ে দেন, তখন বিদেশি মানুষ দেখে আশপাশে ভিড় জমে যায়। জন নিয়ম করে উপস্থিত জনসমাবেশের উদ্দেশে একটা বক্তৃতা দেন পোক্ত বাংলায়, ‘এই বাদুড়গুলো আপনাদের এই অঞ্চলে হাজার হাজার বছর ধরে বংশ পরিক্রমায় থাকছে—এটা আপনার যেমন গ্রাম, এই গাছটাও এই বাদুড়গুলোর ভিটা। আপনার নিজের প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার জন্য এই বাদুড়গুলোকে আপনাদের-আমাদের দরকার। এদের এদের মতো থাকতে দিন, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন, এতে সবারই মঙ্গল!’

রুমী আহমেদ খান: বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার অরল্যান্ডো রিজিওন্যাল মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত এবং ট্রেনিং প্রোগ্রামের পরিচালক। মেডিসিনের (রেসপিরেটরি ও আইসিইউ) সহযোগী অধ্যাপক।