প্রণোদনাবঞ্চিত জনগোষ্ঠী

করোনা মহামারির সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা লেগেছে সমাজের প্রান্তিক মানুষ বলে পরিচিত সংখ্যাগরিষ্ঠ দরিদ্রদের জীবনে। এই প্রান্তিকদের মধ্যে আরও প্রান্তিক হলো তিন পার্বত্য জেলাসহ সমতলের জাতিগত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষেরা। তাঁদের একটা বড় অংশ সরকারের প্রণোদনা সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ)। সংস্থাটির নিজস্ব অনুসন্ধান বলছে, তিন পার্বত্য জেলাসহ সমতল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ২৫ শতাংশ পরিবার এ সহায়তা পেয়েছে। অর্থাৎ ৭৫ শতাংশ পরিবার এর বাইরে রয়ে গেছে।

এমজেএফ গত বুধবার প্রান্তিক মানুষের জীবনের দুঃখ-দুর্দশা নিয়ে অনলাইন বৈঠকের আয়োজন করে। বৈঠকে বিভিন্ন নাগরিক, গবেষণা ও সহায়তা সংস্থার প্রতিনিধিরা ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর প্যাকেজ সবার জন্য বলে দাবি করলেও সমতলে কিংবা পাহাড়ে, প্রান্তিক কিংবা মূলধারার অনেক দরিদ্র মানুষ যে এই সহায়তা পাননি, তা গণমাধ্যমের অনুসন্ধানেও এসেছে। করোনা মহামারিজনিত লকডাউন এবং অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়েছেন, দারিদ্র্য কাটিয়ে ওঠা অনেকেও আবার দরিদ্র হয়ে সরকারের মুখাপেক্ষী হয়ে আছেন। বিশেষত পাহাড় ও সমতলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অবস্থা আরও শোচনীয়ই হওয়ার কথা। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের অনুসন্ধানে তারই সত্যতা মিলেছে।

এমজেএফের সহযোগী সংগঠনগুলো তাদের প্রকল্প এলাকার যে তথ্য তুলে এনেছে তাতে বলা হয়, ২১ হাজার ৮২৬ দলিত ও হরিজন, ২৯ হাজার ৬৩১ প্রতিবন্ধী, ৪৯ হাজার ২৩৯ জেলে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সরকারি কোনো সহায়তা পায়নি। অন্যদিকে, তিন পার্বত্য জেলা ও সমতলের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মাত্র ৪ হাজার ১০০ পরিবার সরকারি সুবিধা পেয়েছে, যা শতকরা ২৫ শতাংশ। অথচ সরকার করোনাকালে ৫০ লাখ দুস্থ মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য ১ হাজার ২৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে এবং এই বিতরণকাজ চালানোর জন্য ৮ কোটি টাকা ব্যয় বরাদ্দও ধরা হয়েছিল। কিন্তু ৭ জুলাই পর্যন্ত মাত্র ১৬ লাখ মানুষ এই টাকা পেয়েছেন। বাকি ৩৪ লাখ মানুষ এখনো সেই সহায়তা পাননি। একেই বলে কাজির গরু কেতাবে থাকলেও গোয়ালে নেই।

সরকারের দাবির সঙ্গে বাস্তবতার এই অমিল হতাশাজনক। এর মধ্যে বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের দিক থেকে দক্ষতার ও সদিচ্ছার অভাবেরই প্রতিফলন ঘটেছে। সরকারের শীর্ষ নেতারা এবং মন্ত্রিপরিষদ কি এই গাফিলতির বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে?