ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক

বর্ষা মৌসুম এলেই সড়ক-মহাসড়কের প্রকৃত অবস্থা বেরিয়ে পড়ে। মুখ ব্যাদান করে থাকা খানাখন্দে ভরে যায় সড়কের অনেক এলাকা। বোঝা যায় নির্মিত সড়কের মানের আসল অবস্থা। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জের ১৩ কিলোমিটার মহাসড়কের দুরবস্থা এর এক দুঃখজনক উদাহরণ। গর্তে ভরা এই সড়ক যানবাহনের যাত্রী ও চালকদের নাজেহাল করে ছাড়ছে, প্রায়শই ঘটছে দুর্ঘটনা। উন্নয়নের বাংলাদেশে এটা কোনো স্বাভাবিক অবস্থা নয়।

ঢাকা-খুলনা যাতায়াতের প্রধান পথটি ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ থেকে যশোর হয়ে খুলনায় পৌঁছেছে। এর বাইরে মাওয়া হয়ে গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট হয়ে আরেকটি সড়ক দিয়ে খুলনায় পৌঁছানো যায়। নির্মীয়মাণ পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযোগ থাকায় এই সড়কের অবস্থা বেশ উন্নত। কিন্তু এই বর্ষা মৌসুমে প্রায়শই মাওয়া ঘাটে ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। তাই যশোর হয়ে খুলনা যাওয়ার মহাসড়কটি ছাড়া এই পথে চলাচলের উপায় থাকে না। তা ছাড়া মোংলা বন্দরের পণ্য পরিবহনও এই পথেই হয়ে থাকে। এত গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের মধ্যে কখনো যশোর অংশে, কখনো ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ অংশের সড়ক ভাঙাচোরা থাকায় আর্থিক ও শারীরিক ক্ষতি অনেক। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হয়, খানাখন্দে পড়ে গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে থাকে, অল্প সময়ের রাস্তা দ্বিগুণ সময়ে পার হতে হয়। এত দিন যশোর অংশের সড়কের বেহাল অবস্থার কথা গণমাধ্যমে আসত। এখন বাড়তি যোগ হয়েছে ঝিনাইদহ-কালীগঞ্জ অংশের ১৩ কিলোমিটার পথ। বারবার গর্ত ভরে দিয়েও কাজ হচ্ছে না। দরকার সড়কটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার।

প্রথম আলোর সংবাদে ঝিনাইদহের সড়ক ও জনপথ বিভাগের বক্তব্য এসেছে। তারা সমস্যাটি স্বীকার করেছে এবং বলেছে, সংস্কারের প্রস্তাব উচ্চপর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। এখন বরাদ্দ পেলেই সড়ক সংস্কার করা হবে। আমাদের প্রশ্ন, বর্ষার দেশে প্রচলিত পদ্ধতির সড়ক নির্মাণ কতটা যুক্তিযুক্ত। বৃষ্টি সহ্য করে অক্ষত থাকতে পারে, এমন কোনো সড়ক নির্মাণ পদ্ধতি কি নেই? কর্মকর্তারা ফি বছর বিদেশ সফর করেই–বা কী শিখে আসেন?

কেবল ঢাকা-খুলনা মহাসড়কই নয়, দেশের অনেক এলাকাতেই সড়কের অবস্থা করুণ। খোদ ঢাকার অবস্থাও তথৈবচ। বর্ষার আগেই সড়ক ও জনপথ বিভাগ কেন সক্রিয় হয় না, সেটাও এক রহস্য বটে। আমরা চাই, সংস্থাটির উচ্চপর্যায় থেকেই এ বিষয়ে শিগগিরই ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সরকারি গাফিলতিতে জনগণের জানমালের ক্ষতি হচ্ছে, এই উপলব্ধি তাঁদের মনে জাগুক।