কোভিড-১৯ মোকাবিলা

করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষার স্বল্পতার সঙ্গে এবার যুক্ত হয়েছে নমুনা সংগ্রহে ভোগান্তি এবং ফলস নেগেটিভ–সংশ্লিষ্ট ঝুঁকি। এর বাইরে ঢিলেঢালা লকডাউন শেষে জনজীবনে এমন একটা অবস্থা চলছে, যা সংক্রমণের ঝুঁকি ক্রমাগতভাবে বাড়িয়ে চলেছে। দায়িত্বশীল বিশেষজ্ঞরা এখন অকপটে স্বীকার করছেন, পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে ঠেকবে, সেটা হলফ করে বলা কঠিন। 

কোনো সন্দেহ নেই, টেস্টের সংখ্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটেছে। কিন্তু তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট কম। দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মোট পরীক্ষাকেন্দ্র ৫০টি। ঢাকাতেই ২৭টি, দেশের অবশিষ্ট অংশে ২৩টি। এবং ধরে নিতে হবে যে তুলনামূলক দক্ষ জনশক্তি ঢাকার ২৭টিতে যেমনটা আছে, সেটা ঢাকার বাইরে নেই। আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে ভালো ফল পেতে যথাযথভাবে নমুনা সংগ্রহ গুরুত্বপূর্ণ।

নমুনা সংগ্রহের পর ল্যাবরেটরির পুরো কাজটা মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ওপর নির্ভরশীল। তথাকথিত আইনি জটিলতায় বহু বছর ধরে তাঁদের নিয়োগ বন্ধ। কোভিড-১৯ সংক্রমণের শুরুতেই এই প্রসঙ্গ আলোচনায় এসেছে। শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরিষেবা বিভাগ গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছে ৩ হাজার নতুন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও টেকনিশিয়ান নিয়োগের একটি প্রস্তাব পাঠালে তিনি তাৎক্ষণিকভাবে তা অনুমোদন করেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব এই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্রথম আলো বন্ধুসভার একজন কর্মীর কোভিড–১৯ পরীক্ষায় ফলস নেগেটিভ এসেছিল, সেটা প্রমাণিত। যথাসময়ে তঁার পজিটিভ প্রমাণিত হলে তিনি বেঁচে যেতেন, সেটা বলা কঠিন। কিন্তু যথাচিকিৎসাটা শুরু করা সম্ভব হতো। এ রকম ফলস নেগেটিভের রোগী বাস্তবে কতজন মারা যান, সেটা জানা সম্ভব হয় না। ফলে অ্যান্টিবডি টেস্ট ফলস নেগেটিভ দেবে বলে যে বিরোধিতার কথা শোনা যায়, সেটা কতটা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন জরুরি।

এ ছাড়া আরটি-পিসিআর দ্বারা পরীক্ষা করলেও যে শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ ফলস নেগেটিভ আসে, সেটা বিশ্বে সর্বত্রই স্বীকৃত। সে কারণে বহু দেশ নেগেটিভ বা পজিটিভ যা–ই আসুক, অল্প বিরতিতে দুবার টেস্ট করার বিধান চালু রেখেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সামর্থ্য এবং লোকবলের অভাবে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকেরা সম্ভবত দুবার টেস্টের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনার মধ্যেই রাখতে পারেননি। তবে এই সীমাবদ্ধতার সঙ্গে অদক্ষ বা আধা দক্ষদের হাতে টেস্ট করাতে গিয়ে টেস্টের ভুয়া ফলাফলের মাত্রা বেড়ে গেছে, যা জনস্বাস্থ্যের প্রতি আরেকটি বড় হুমকি তৈরি করেছে।      

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গোড়া থেকেই টেস্ট টেস্ট করে নিনাদ তুলেছে। বিশ্বে যেসব দেশ এতে সাড়া দিতে পারেনি, বাংলাদেশ তার অন্যতম। অর্থনীতির অবস্থা বাংলাদেশের থেকে খারাপ এমন অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশ জনসংখ্যার অনুপাতে টেস্ট সংখ্যায় পিছিয়ে।  

ড. মোহাম্মদ সহিদুল্লার নেতৃত্বাধীন ২৭ সদস্যের জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি সরকারের সঙ্গে টেস্টের সংখ্যা প্রতিদিন ৩০ হাজার পর্যন্ত বাড়ানোর সামর্থ্য নিয়ে আলোচনা করেছিল। কমিটির একজন মুখপাত্র আমাদের নিশ্চিত করেন যে সরকার বলেছে, এটা তারা পারবে। আমরা মনে করি, এই সামর্থ্য বৃদ্ধির বিষয়টি যত দ্রুত নিশ্চিত করা যায়, ততই মঙ্গল।

গণস্বাস্থ্যের কিট পরীক্ষার বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। অনুমোদন মিললেও তা সাধারণ মানুষের রোগ শনাক্তের জন্য সহজলভ্য হতে জুলাই পেরিয়ে যাবে। সে কারণে সরকারকে আরটি-পিসিআর দিয়ে টেস্ট সংখ্যা বিশ্বাসযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। যেসব দেশ টেস্ট কম করেছে, তারা মাস্ক, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্বের নিয়ম কার্যকর করে সুফল পেয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অনেক প্রতিবেশী, বিশেষ করে ভারত ও পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও তা পারেনি।