তৃতীয় দফা নির্বাচন

দলীয় সরকারের অধীনে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে ক্ষমতাসীন দল দীর্ঘদিন বড় মুখ করে বলেছে, নির্বাচনে কারচুপি ও ব্যালট ছিনতাইয়ের দিন শেষ হয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের তৃতীয় দফা নির্বাচনের পর কি আর তা বলা যাচ্ছে? নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে সরকারি মহলের অন্যতম যুক্তি ছিল, তাঁদের আমলে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার নির্বাচন হয়েছে এবং তা বিরোধী দলের কাছে মোটামুটি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। এখন তাঁরা কী বলবেন?
অনস্বীকার্য যে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে বড় ধরনের জাল জালিয়াতির দিন পেছনে ফেলে এসেছিল বাংলাদেশ। এবারও উপজেলা নির্বাচন পর্বটি সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ বয়ে এনেছিল। কারণ, একতরফা সাধারণ নির্বাচনের পর সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাদের ‘রাজনৈতিক ক্ষতি’ পুষিয়ে নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা হয়তো জোরালো করে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো উপজেলা নির্বাচন ইতিমধ্যেই যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
আরও উদ্বেগজনক যে নির্বাচনী পরিবেশ পরিস্থিতির ক্রমে অবনতি ঘটছে। তৃতীয় দফায় এসে তিনজন মারা গেছেন। দ্বিতীয় পর্বে মারা গিয়েছিলেন দুজন। অথচ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহিংসতা বলতে গেলে একেবারেই অনুপস্থিত ছিল।
উপজেলা নির্বাচন কতটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা ভিন্ন বিতর্ক। তবে এবারই ইতিহাসে প্রথম একটি একতরফা সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘটনাকে রুটিন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। নির্বাচন কমিশনের বরং উচিত ছিল তাদের মলিন হওয়া ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উজ্জ্বল করার সুযোগকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে সচেষ্ট হওয়া।
কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। বরং পত্রিকান্তরে প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার বরাতে খবর বেরিয়েছে, স্বয়ং প্রধান নির্বাচন কমিশনার অতিরিক্ত পরিশ্রমে ক্লান্ত হয়ে এখন বিশ্রামে আছেন। শারীরিক অসুস্থতা হলে ভিন্ন কথা ছিল। কিন্তু তিনি অবকাশযাপনে বিদেশে রয়েছেন। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হতে থাকলে হয়তো এই প্রশ্ন উঠত না। কিন্তু এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিতে পারে যে অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের ভবিষ্যৎ কী হবে।
এত দিন তবু স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সম্পন্ন করতে তাদের কৃতিত্ব দাবি করার একটা ভিত্তি ছিল। এখন এটা স্বীকার করতে হবে যে সরকারের চাপে পড়ে কিংবা নিজেদের অদক্ষতার কারণে সেই ভিত্তি অনেকটাই নড়বড়ে হয়ে গেছে। এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে তাদেরই মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে হবে।