স্বৈরাচারের কাছে ধরনা

মাত্র ২৩ বছর আগে গণ-অভ্যুত্থানে এরশাদ স্বৈরাচারী সরকারের পতন ঘটেছিল। এরপর সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সরকার পরিবর্তনের গণতান্ত্রিক ধারা দেশে ফিরে আসে। এরশাদের দীর্ঘ নয় বছরের অপশাসনের সময় সেলিম-দেলোয়ার-বসুনিয়া-তাজুল-ময়েজউদ্দিনসহ অগণিত ছাত্র-যুবক-রাজনৈতিক নেতা শহীদ হয়েছেন। সবাই চাইছিলেন, এরশাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হোক, তাঁর বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক। মামলা ও বিচার শুরু হয় বটে, কিন্তু মাত্র একটি মামলায় নামমাত্র সাজা ছাড়া আর কোনো মামলা সঠিকভাবে পরিচালিত হয়নি। অনেক মামলা তুলে নেওয়া হয়। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ভোটে জয়লাভ নিশ্চিত করার জন্য পর্যায়ক্রমে এরশাদের সঙ্গে প্রকাশ্য ও গোপন আঁতাত করে চলতে থাকে। দুই দল ও জোটের আশীর্বাদ ছাড়া এরশাদের পক্ষে জাতীয় রাজনীতিতে সদম্ভ পদচারণ সম্ভব ছিল না।

আদর্শের রাজনীতি ও নির্বাচনী রাজনীতির মধ্যে অনেক পার্থক্য। গণতন্ত্রে নির্বাচনী রাজনীতির অগ্রাধিকার অনস্বীকার্য। কিন্তু নির্বাচনে শুধু জয়লাভের জন্য আদর্শ বিসর্জন দেওয়া যায় না। যেকোনো রাজনৈতিক দলের ন্যূনতম আদর্শগত ভিত্তি অবশ্যই থাকতে হবে। এসব আদর্শের প্রথম কথা হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্র ও স্বৈরাচারের মধ্যে কোনো আপস হতে পারে না। যে দল স্বৈরাচারকে স্পষ্টভাবে ‘না’ বলতে পারে না, গণতন্ত্রে তার পক্ষে অবদান রাখা খুব কঠিন।

দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এরশাদ এখনো রাজনীতির মাঠে ছড়ি ঘোরাতে পারছেন। তিনি এখন গণতন্ত্রের দাবিদার সেজেছেন। বলছেন, তিনি একাই নির্বাচন করে ক্ষমতায় যাবেন। এরশাদ অধ্যায়ের সমাপ্তি হওয়ার কথা ছিল বিগত শতাব্দীর নব্বই সালে। কিন্তু বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য যে সেই বোঝা এখনো দেশকে বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দেশে দুটি বড় রাজনৈতিক দল। দেশবাসী চায় না যে ভোটের রাজনীতির জন্য তারা গণতন্ত্রের মৌলিক আদর্শ বিসর্জন দিক। এর পরও যদি তারা আদর্শ জলাঞ্জলি দেয়, জনগণ শুধু বলবে, ছি, ছি, ছি!