বাংলাদেশের জনগণের ডিএনএতে রয়েছে গণতন্ত্র

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজীনার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য আইওয়াতে। প্রথমে আইওয়া স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাস, পরে ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের গ্র্যাজুয়েট স্কুল থেকে জনপ্রশাসন ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ড্যান মজীনা। তিনি নয়াদিল্লি, ইসলামাবাদ ও কিনশাসায় মার্কিন দূতাবাসে বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসে তিনি পলিটিক্যাল কাউন্সেলর হিসেবে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত কাজ করেছেন। ড্যান মজীনা ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এঙ্গোলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগ দেন ২০১২ সালের নভেম্বরে। গত বুধবার তিনি অতিথি হিসেবে প্রথম আলো কার্যালয়ে এলে তাঁর এই সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আব্দুল কাইয়ুম ও রাহীদ এজাজ

ড্যান মজীনা
ড্যান মজীনা

প্রথম আলো  কেমন আছেন? বাংলাদেশ কেমন লাগছে?
ড্যান মজীনা  ভালো, খুবই ভালো। বিশেষভাবে এ দেশের জনগণের মধ্যে বিরাট সম্ভাবনা আমি খুঁজে পেয়েছি।
প্রথম আলো  ২০১২ সালে প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছিলেন টিকফা (বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি) সই হলে দুই দেশের বাণিজ্য সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। চুক্তিটি গত বছর সই হয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মূল্যায়ন কী?
ড্যান মজীনা  টিকফা সইয়ের পর এ-সংক্রান্ত কাউন্সিলের প্রথম বৈঠক ঢাকায় গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রথম বৈঠকে দুই দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা, প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে দুই পক্ষ আলোচনা করেছে।
প্রথম আলো  চুক্তি হওয়ার আগে ও পরে বাস্তবে কতটা অগ্রগতি হয়েছে? নাকি এখন পর্যন্ত বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে কি শুধু আলোচনাই হয়েছে?
ড্যান মজীনা  এটা কোনো জাদুর কাঠি নয়। বাণিজ্য সম্প্রসারণের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে দুই পক্ষ কথা বলার পর বাস্তবে কিছু অগ্রগতি নিশ্চয় হয়েছে। অগ্নিনির্বাপক ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত যন্ত্রপাতি আমদানির ওপর বাংলাদেশ সরকার শুল্ক তুলে নিয়েছে। কয়েকজন শ্রমিকনেতার বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তগুলো বৈঠকেই নেওয়া হয়েছে। আর এগুলোই হচ্ছে তাৎক্ষণিক ফলাফল। সামগ্রিকভাবে আমাদের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সম্প্রসারণে লালফিতার দৌরাত্ম্যকে বড় বাধা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চান। কিন্তু এখানে এসে তাঁদের দুঃসহ পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জিএসপি পুনর্বহাল এবং শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
প্রথম আলো  বাংলাদেশের জিএসপি পুনর্বহালের ব্যাপারে আপনি কি আশাবাদী?
ড্যান মজীনা  প্রশ্নটা শুধু জিএসপি নিয়ে নয়, এর পরিধি আরও ব্যাপক। প্রশ্নটা হলো, বাংলাদেশ কি পোশাকশিল্প খাতকে আরেকটি তাজরীন ফ্যাশনস কিংবা রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা করতে পারবে?
প্রথম আলো  পোশাকশিল্প খাতে পরিবেশের গুণগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আপনার কাছে কী ইতিবাচক ইঙ্গিত চোখে পড়েছে?
ড্যান মজীনা  এ খাতের সংস্কারের ব্যাপারে আমি অনেকগুলো ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ করেছি। বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, তা পৃথিবীর কোথাও হয়নি। গত বছরের ২৭ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বাংলাদেশের জিএসপি স্থগিত করেন। এ সুবিধা ফিরে পেতে বাংলাদেশের সামনে একটি কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ডের মতো উদ্যোগগুলো নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের যেসব কারখানায় পোশাক উৎপাদিত হয়, সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে ক্রেতারা এগিয়ে এসেছেন। বিভিন্ন দেশ এগিয়ে এসেছে। কারখানার নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের অধিকার দেওয়ার বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়কে অন্তর্ভুক্ত করে জনসাধারণের দেখার সুযোগ রেখে একটি তথ্যভান্ডার (ডেটাবেইস) তৈরির সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা এর আগে পৃথিবীর কোথাও হয়নি। গত বছরের জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ১৫৭টি ট্রেড ইউনিয়ন পোশাক কারখানায় নিবন্ধিত হয়েছে; অথচ গত ৪০ বছরে এটা ভাবা যায়নি। বাংলাদেশের ৮০০ কারখানাকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা ধরে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ‘বেটার ওয়ার্ক প্রোগ্রাম’ নামের কর্মসূচি চালু করেছে। এসব পরিবর্তনকে অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে। তবে এটা ঠিক যে, আরও অনেক কিছু করা বাকি রয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এখনো ২০০ কারখানা পরিদর্শক নিয়োগের প্রক্রিয়াটি শেষ হয়নি। এখনো অনেক কারখানা পরিদর্শন বাকি রয়েছে। তথ্যভান্ডারে এখনো কোনো তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফাঁকা রয়েছে তথ্যভান্ডারটি। ইপিজেডে জাতীয় শ্রম আইন বাস্তবায়নের বিষয়টি ঝুলে আছে। এটির সুরাহা করতে হবে। অনৈতিক শ্রমচর্চা বন্ধ করতে হবে। সবকিছুর পরও বলব, অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে বলে আমি পোশাক খাতের সংস্কারের ব্যাপারে উজ্জীবিত বোধ করছি।
প্রথম আলো  ভারত, পাকিস্তান, জাম্বিয়া ও অধুনালুপ্ত জায়ারে কাজ করেছেন। এসব দেশের সঙ্গে মেলাতে বলা হলে কোথায় রাখবেন বাংলাদেশকে?
ড্যান মজীনা  আমি কখনো এভাবে তুলনা করি না। আর এ ধরনের তুলনা আমার পছন্দ নয়। বাংলাদেশ একটি নবীন দেশ। একটি বিকাশমান গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো গড়ে তোলার চেষ্টা করছে। গণতন্ত্র বিকশিত করা সহজ নয়। তবে বাংলাদেশ নিজেই তার পথটি খুঁজে নেবে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কখনো এগিয়ে চলে; আবার কখনো পেছনে হাঁটে। আমি বিশ্বাস করি, এ দেশের জনগণের ডিএনএতে রয়েছে গণতন্ত্র। আমি একজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা বলেও বুঝতে পারি, তিনি কতটা রাজনীতিসচেতন। তাঁর বিশ্বাস, আদর্শ ও

সমর্থন—সবকিছুতেই সুস্পষ্ট যুক্তি আছে। তাই আমি মনে করি, গণতন্ত্রই বাংলাদেশের সেরা অর্জন হয়ে উঠবে।
প্রথম আলো  গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক মানবাধিকার পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
ড্যান মজীনা  এ বিষয়গুলো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক মানবাধিকার প্রতিবেদনে। আমরা গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে দ্রুত ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এসব অভিযোগের তদন্ত করে দোষী লোকজনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে বলেছি।
প্রথম আলো  যুক্তরাষ্ট্র তো র্যাবকে বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে সহযোগিতা করছে। অথচ র্যাবের বিরুদ্ধে কত অভিযোগ। ব্যাপারটা তাহলে কী রকম দাঁড়াল?
ড্যান মজীনা  মানবাধিকার সমুন্নত রাখার বিষয়ে র্যাবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে। র্যাবের অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেল গঠনে এ সহায়তা দেওয়া হয়। এ প্রশিক্ষণ শিবিরে অংশগ্রহণকারী র্যাব কর্মকর্তাদের মধ্যে ছয় সপ্তাহ আগে সনদ বিতরণ করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা এ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য।
প্রথম আলো  র্যাবের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নতুন নয়। এ প্রশিক্ষণ শিবিরের আগে ও পরে র্যাব সদস্যদের মধ্যে গুণগত কোনো পরিবর্তন হয়েছে কি?
ড্যান মজীনা  এ পরিবর্তন তো রাতারাতি হওয়ার কথা নয়। জনগণ র্যাবের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অনেক বিষয়েই অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেলের নজরে এনেছেন। তবে খবরের কাগজে র্যাবের বিরুদ্ধে আমরা অভিযোগের যেসব খবর পাই, সে ক্ষেত্রে আরও অনেক কিছু করার আছে। র্যাবকে দায়িত্বশীল হতে হলে জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে।
প্রথম আলো  বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকেরা যুক্তরাষ্ট্রে নানা ক্ষেত্রে সফলতার পরিচয় দিচ্ছেন। অর্থনীতিসহ বাংলাদেশের নানা ক্ষেত্রে তাঁদের কাজে লাগানোর কোনো পরিকল্পনা কি নিয়েছেন?
ড্যান মজীনা  বাংলাদেশে দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে যখনই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছি, প্রতিবারই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাঁরা অত্যন্ত সমৃদ্ধ অভিবাসী এবং বাংলাদেশের সঙ্গে তাঁদের আবেগপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমি তাঁদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে উৎসাহিত করে আসছি। বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষিত করে তুলতে অনুরোধ জানাচ্ছি। বাংলাদেশে যাতে সাহায্য পাঠাতে পারেন, এ জন্য লিফটবাংলা নামের বিশেষ একটি কর্মসূচিতে সহায়তা দিতে বলছি। একটি ওয়েব পোর্টালের সাহায্যে যে-কেউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের জন্য এতে সাহায্য পাঠাতে পারেন। ১১টি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার মাধ্যমে এ টাকা বাংলাদেশে উন্নয়নমূলক কাজে খরচ করা হবে। আমেরিকান বাংলাদেশিরা তাঁদের প্রেরিত অর্থের যথাযথ ব্যবহারের বিষয়ে যেন পূর্ণ আস্থা রাখতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হয়েছে। সবশেষে বলব, আমি দুই দেশের জনগণের মাঝে যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করছি।
প্রথম আলো  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাপান ও চীন সফর করেছেন। কৌশলগত প্রেক্ষাপটে এ সফরগুলোকে কীভাবে দেখছেন?
ড্যান মজীনা  কৌশলগত অবস্থানের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, অনেক দেশেরই বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে আগ্রহ রয়েছে। কাজেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার হওয়া; প্রধানমন্ত্রীর জাপান ও চীনে সফল সফরের মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা প্রতিফলিত হচ্ছে। আর এটি সবার জন্য মঙ্গলজনক।
প্রথম আলো  দুই বছর আগে প্রথম আলোকে বলেছিলেন, রাজনৈতিক অচলাবস্থা দূর করতে সফল সংলাপের বিষয়ে আপনি আশাবাদী। শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সংলাপের ব্যাপারে নতুন কোনো সম্ভাবনা কি দেখছেন? কিংবা নতুন কোনো নির্বাচন হবে, যেখানে সব দল অংশ নেবে?
ড্যান মজীনা  এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। এ নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ৬ জানুয়ারি, ১১ ফেব্রুয়ারি ও ৩০ এপ্রিলে দেওয়া বিবৃতি দেখলেই আমাদের অবস্থান বুঝতে পারবেন। আমি কিন্তু আগেই বলেছি, গণতন্ত্রই বাংলাদেশের চূড়ান্ত অর্জন হয়ে উঠবে। বাংলাদেশ নিজের মতো করে লড়াই করেই গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখবে। কীভাবে হবে, সেটা আমি জানি না। তবে এটা জানি, এখানকার জনগণই পথ খুঁজে বের করবে। কারণ, তাদের ডিএনএতে রয়েছে গণতন্ত্র।
প্রথম আলো  বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শেষে কি আপনি অবসরে যাচ্ছেন?
ড্যান মজীনা  বাংলাদেশে আমার দায়িত্ব পালনের মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে জেনে আমি কিছুটা বিষাদগ্রস্ত। এ দেশের সঙ্গে খুব যুক্ত ছিলাম বলে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়া নিয়ে আমি বিষণ্ন। বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন শেষে আমি অবসরে যাব। এরপর হয়তো চুক্তিভিত্তিক রাষ্ট্রদূত হিসেবে কোনো দেশে অথবা মহাপরিদর্শকের দপ্তরে আমাকে নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।
প্রথম আলো  নিশ্চয় আবার বাংলাদেশে আসবেন?
ড্যান মজীনা  হয়তো। তবে প্রথম এক বছরে নয়। কারণ, আমি চাই আমার উত্তরসূরি নিজের একটি অবস্থান গড়ে তুলুক। এরপর আমার বাংলাদেশে আসার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
প্রথম আলো  বাংলাদেশে আপনার সময় কেমন কেটেছে?
ড্যান মজীনা  এটা সবাই নিশ্চয় ভালো করেই জানেন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমাকে যেমন বাংলাদেশের জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে, তেমনি অন্য জায়গায়ও আমি যেতে পারতাম। তবে আমি বাংলাদেশে আসার সিদ্ধান্ত নিই। কারণ, এটি বিশেষ একটি দেশ, যেখানকার মানুষগুলোও বিশেষ ধরনের। বাংলাদেশ ঘুরে এটি জেনেছিলাম। আমি এখানে আসার আগেই বলেছিলাম, আমি শুধু নিয়মমাফিক দায়িত্ব পালন করব না; আমি এ দেশ ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছে যাব। সেটা আমি করেছি। তিনটি জেলা বাদে আর সব কটি জেলায় আমি গিয়েছি। আমার মেয়াদ শেষের আগেই সেসব জেলায় যাব। মানুষের সঙ্গে কথা বলব। আমি তো শুধু ঢাকার নয়, পুরো বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। দায়িত্ব পালনের সময় আমি বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেতুবন্ধ গড়ার চেষ্টা করেছি। বাংলাদেশকে আবিষ্কার করতে চেয়েছি।
প্রথম আলো  বাংলাদেশের বন্ধু হিসেবে এ দেশের জনগণের জন্য আপনার বিশেষ বার্তা কী?
ড্যান মজীনা  বাংলাদেশ নিয়ে তো অনেক কিছুই বলতে চাই। আমি মনে করি, এ দেশের অনেক মানুষ দরিদ্র হলেও তাদের রয়েছে অফুরন্ত সৃজনশক্তি। মানুষও অত্যন্ত চমৎকার। ওরা একাধারে পরিশ্রমী ও উদ্যমী। সবকিছু মিলিয়েই বাংলাদেশ অনন্য। তা ছাড়া ভৌগোলিকভাবেও এ দেশের রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য। আমি বলব, সবদিক থেকে সত্যিকার অর্থেই একটি সমৃদ্ধ দেশ বাংলাদেশ।
প্রথম আলো  আপনাকে ধন্যবাদ।
ড্যান মজীনা  আপনাদেরও ধন্যবাদ।