একটু সদয় হওয়া যায় না সাকিবের প্রতি?

সাকিব আল হাসান
সাকিব আল হাসান

সাকিব আল হাসানকে আগামী ছয় মাসের জন্য ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের ক্রিকেট থেকে বহিষ্কার করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সঙ্গে আছে ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের বাইরের যেকোনো লিগে খেলার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা। এই সময় তিনি নাকি বোর্ডের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করতে পারবেন না।
পুরো বিষয়টি নিয়েই এই মুহূর্তে ক্রিকেটপ্রেমীরা তর্কে মেতে আছে। আলোচনা চলছে ব্যাপক। কিন্তু আসল কথা হচ্ছে এ দেশের ক্রিকেটে এযাবত্কালের সেরা এই ক্রিকেটারটিকে নিয়ে এই সমস্যা তৈরি করল কে? এ ক্ষেত্রে সাকিব বেশি দায়ী, নাকি বিসিবি?
সাকিবের এই নিষেধাজ্ঞা নাকি এসেছে অনেকগুলো কারণে। তবে মূল কারণ হলো বোর্ড থেকে অনাপত্তিপত্র না নিয়ে ক্যারিবীয় ক্রিকেট লিগে খেলতে যাওয়া। এটা ঠিক যে বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন ঘটনার জন্য সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছিলেন তিনি। এই তো কিছু দিন আগেই তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে জড়িয়ে পড়েছিলেন একটি বিতর্কিত ঘটনায়। কিন্তু কথা হচ্ছে, নিজের স্ত্রীকে বখাটেদের দ্বারা উত্ত্যক্ত হতে দেখলে কিন্তু শৃঙ্খলা ভঙ্গের ভয়ে কোনো সাধু-সন্তও হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। সাকিব ঠিক সেটাই করেছিলেন। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁর স্ত্রীর। কিন্তু এই ঘটনায় কেন তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হবে? এখন তো শোনা যাচ্ছে, সাকিবের স্ত্রীকে উত্ত্যক্ত করা লোকটি নাকি খুব প্রভাবশালী। খোদ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গেই নাকি তাঁর বিশেষ সম্পর্ক আছে!

ক্যারিবীয় ক্রিকেট লিগে বোর্ডের অনাপত্তিপত্র না নিয়ে সাকিবের খেলতে যাওয়ার ব্যাপারেও তৈরি হয়েছে নানা চিত্রনাট্য। কথা হচ্ছে, সাকিবের মতো একজন ক্রিকেটার কি এতটাই বোকা যে তিনি বোর্ডের অনুমতি না নিয়ে বিদেশের লিগে খেলতে চলে যাবেন? এ ক্ষেত্রে চলে এসেছে বোর্ডের একটি বিশেষ কমিটির প্রধানের কথা। তিনিই নাকি সাকিবকে মৌখিকভাবে ক্যারবীয় লিগে খেলতে যাওয়ার অনুমতি দিয়ে বলেছিলেন, পরে তিনি অনাপত্তিপত্রে সই করে দেবেন।

সাকিব কিন্তু ফিরে এসেছেন বোর্ডের নির্দেশ পাওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই। এখন সাকিবকে যদি শাস্তি দেওয়া হয়, তবে সেটা একপেশে হয়ে গেল কি না, তা নিয়ে ভাবার কিন্তু যথেষ্ট কারণ আছে। সাকিব যদি এ ক্ষেত্রে অপেশাদার আচরণ করে থাকেন, তাহলে অপেশাদারভাবে সাকিবকে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে উড়াল দেওয়ার অনুমতি দিয়ে তো একই রকম অন্যায় করেছেন বোর্ডের ওই বিশেষ কমিটির প্রধান।

সাকিবের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ এসেছে দলের লঙ্কান কোচ চন্দিকা হাথুরুসিংহের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের এবং দেশের হয়ে ভবিষ্যতে টেস্ট ও ওয়ানডে না খেলার হুমকি দেওয়ার। কিন্তু এই অভিযোগ যে ‘গোপন ই-মেইলে’র মাধ্যমে উঠেছে, সেই ‘গোপন’ ই-মেইল সংবাদমাধ্যমের হাতে গেল কীভাবে—সেই প্রশ্ন কিন্তু আসতেই পারে। কোচ যদি সাকিবের বিরুদ্ধে বোর্ড সভাপতি বরাবর কোনো নালিশও করে থাকেন, সেই মেইল অন্যের হাতে যাওয়া কিন্তু বড় ধরনের ষড়যন্ত্রেরই ইঙ্গিত দেয়। সাকিবকে ঘিরে বাংলাদেশের ক্রিকেট কি তাহলে কোনো নীলনকশার শিকার?

বিসিবি সভাপতি সেদিন সাকিবের শাস্তি ঘোষণার সময় এমন ভাব করছিলেন যেন সাকিব আজীবন নিষেধাজ্ঞার মতো কোনো অপরাধ করেছেন, কিন্তু তাঁর শাস্তি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু লঘু পাপে যে সাকিবকে গুরুদণ্ড দেওয়া হয়নি—এ কথা কি বিসিবি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে?

অনেকেই বলছেন, সাকিবকে একটু বাড়াবাড়ি রকমেরই শাস্তি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সাকিবের দুই-একটি ভুল যদি হয়েও থাকে, তাহলেও কি বিসিবি পারত না সেগুলোতে কঠোর না হয়ে তাঁকে সংশোধিত হওয়ার পথ করে দিতে?

যদি কারও ভুল থাকে বিচার হবে ভালোবাসা দিয়ে, কঠোর হয়ে নয়। রুখে দেওয়া সহজ, গড়ে নেওয়া খুব কঠিন। নিষেধাজ্ঞার খড়্গ ঝুলিয়ে নয়, সাকিবের ভুলগুলো শোধরাতে দরকার ছিল অন্য কোনো রাস্তা। দেশের ক্রিকেটের অভিভাবক বিসিবি কি পারত না সে পথে হাঁটতে?

সাকিবের শাস্তিটা ফিরিয়ে নিলে কি খুব ক্ষতি হয়ে যায়?