সম্প্রচার নীতিমালা

গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে যে বহুল আলোচিত সম্প্রচার নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমত, এই নীতিমালা প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও তাঁদের মতামতকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, নীতিমালায় স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠনের কথা বলা হলেও তা কবে, কীভাবে ও কাদের নিয়ে গঠিত হবে, সেই বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য নেই। তৃতীয়ত, কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত এর কর্তৃত্ব তথ্য মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত রাখার কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ যত দিন কমিশন গঠিত না হবে তত দিন তথ্য মন্ত্রণালয়ের কাছেই বেসরকারি বেতার-টিভি জিম্মি হয়ে থাকবে। এটি গণতান্ত্রিক দেশে চলতে পারে না।
যেখানে সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে প্রত্যেক নাগরিকের বাক্ ও ভাব প্রকাশের ও সংবাদক্ষেত্রের স্বাধীনতার যে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে, সেখানে সম্প্রচার নীতিমালায় প্রতিষ্ঠানবিশেষের খবর প্রকাশের ওপর বিধিনিষেধ জারির কথা বলা হয়েছে। গণমাধ্যম কী প্রচার করবে, কী প্রচার করবে না, সেটি সরকার বা তথ্য মন্ত্রণালয় নীতিমালা জারি করে বলে দিতে পারে না।
নীতিমালা অনুযায়ী বিচারিক ক্ষমতা আছে এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়, এমন ছবি ও বক্তব্য প্রচার করা যাবে না।জেলা প্রশাসকদের বিচারিক ক্ষমতা আছে। তাই বলে তাঁদের আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড প্রচার করা থেকেও কি গণমাধ্যম বিরত থাকবে?
তবে নীতিমালায় যে বিভ্রান্তিকর, অসত্য তথ্য-উপাত্ত পরিহারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, সেটি আমরা সমর্থনযোগ্য বলেই মনে করি। গণমাধ্যম স্বাধীনতার নামে অসত্য ও উদ্দেশ্যমূলক তথ্য পরিবেশন করলে তা জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। নীতিমালায় সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ বা অবমাননাকর দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার না করার কথা বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো সদস্য যদি বেআইনি কিছু করে, সেটিকেও প্রতিষ্ঠানের প্রতি কটাক্ষ বলে চালিয়ে দেওয়ার সুযোগ থাকে।
ইতিমধ্যে সংবাদকর্মীরা সম্প্রচার নীতিমালার প্রতিবাদ করেছেন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। তাঁদের আশঙ্কা, এই নীতিমালার মাধ্যমে সরকার বেসরকারি বেতার-টিভির হাত-পা বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাই অবিলম্বে সম্প্রচার নীতিমালা বাতিল করা হোক।