বন্যা পরিস্থিতি

অব্যাহত বৃষ্টি ও উজান থেকে আসা পানির কারণে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটায় লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। আবহাওয়া বিভাগ সামনে আরও বৃষ্টির যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে।
এটা স্পষ্ট যে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি সরকারি তরফে ছিল বলে মনে হয় না। ফলে পানিবন্দী মানুষ খাবার, পানি ও প্রয়োজনীয় ওষুধের অভাবে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণের কোনো উদ্যোগ এখনো তেমনভাবে শুরু হয়নি। বন্যা পূর্বাভাস বা সতর্কীকরণ বলে যে একটি ব্যাপার রয়েছে, তা কাজ করলে এমন পরিস্থিতি হওয়ার কথা নয়। প্রশ্ন, টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে এ ধরনের একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে—সেটা জেনে আগেভাগে কেন পরিস্থিতি মোকাবিলার দরকারি উদ্যোগ নেওয়া হলো না?
ভাটির দেশ হিসেবে উজান থেকে আসা পানি নামবে, এটাই বাস্তবতা। এ কারণে উজানে কী পরিমাণ বৃষ্টিপাত হচ্ছে, তার ওপর এখানকার বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই নির্ভর করে। তাই সেখানকার পরিস্থিতির দিকে নজর রাখলে বাংলাদেশে বন্যার আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে ভারত, নেপাল ও বাংলাদেশের মধ্যে নদীর পানির ওঠানামা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বা এ-জাতীয় তথ্য বিনিময়ের আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা কার্যকর নেই। দেশগুলোর মধ্যে এ ধরনের তথ্য বিনিময়ের বিষয়টি নিশ্চিত করা গেলে বন্যার পূর্বাভাস বা আগাম প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। তবে ইন্টারনেটের যুগে এসব তথ্য পাওয়া কঠিন নয়। বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো যদি সক্রিয় থাকত, তবে অনেক আগেই এ ব্যাপারে সতর্ক করা যেত।
জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণ তৎপরতা শুরু এবং দুর্গত মানুষগুলোর পুনর্বাসন করাই সরকারের এই মুহূর্তের করণীয়।