ছাত্রদলের নতুন কমিটি

বিএনপি জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক রীতিনীতি অনুসরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি এই কমিটি গঠনে ছাত্রদলের গঠনতন্ত্রও মানেনি। গঠনতন্ত্রের একাধিক বিধানকে লঙ্ঘন করেছে। যেমন, চারটি নির্দিষ্ট পদে ২৬ জনের পরিবর্তে তারা ১২৪ জনকে নিয়োগ দিয়েছে। এটা প্রমাণ করে দলটির নীতিনির্ধারণে স্বেচ্ছাচারিতা কীভাবে বাসা বেঁধেছে। অথচ তারা চাইলেই গঠনতন্ত্র বদলে নিতে পারত।
উপরন্তু পদবঞ্চিতদের সহিংস প্রতিবাদ ও মিছিল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির প্রতি হুমকি সৃষ্টি করেছে। কমিটি গঠনের এই দলাদলি পরে শিক্ষাঙ্গনকে সংক্রমিত করতে পারে। ওপর থেকে এভাবে কমিটি চাপিয়ে যেমন অগণতান্ত্রিক, তেমনি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শিক্ষাঙ্গন বা শিক্ষার্থীদের সমস্যা নিয়ে সংগঠনটি কাজ করলে কাউন্সিল ডেকে কাউন্সিলরদের ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করাই শ্রেয় ছিল। কিন্তু বিএনপি নেতৃত্ব সেটি অতীতেও করার প্রয়োজন বোধ করেনি, এখনো না করাটা দুর্ভাগ্যজনক।
ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে বিএনপির পাঁচটি পক্ষ সক্রিয়বয়সসীমা চল্লিশের নিচে রাখা ছাড়া আগের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোনো পরিবর্তন নেই। নতুন কমিটির অনেকেরই ছাত্রত্ব নেই। আগের অকার্যকর ও নিষ্ক্রিয় হিসেবে নিন্দিত পকেট কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদকই এবার পদোন্নতি পেয়ে যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আগের ধারাবাহিকতায় সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটি হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্ব আবারও প্রমাণ করল গণতান্ত্রিক রীতিনীতির তোয়াক্কা তারা করে না। অথচ দলটি মুখে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন বেগবান করার কথাই জোরগলায় বলছে। যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তারা দলের অভ্যন্তরে বিকশিত হতে দিতে অনিচ্ছুক, সেটাই তারা রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করছে। এটি স্ববিরোধিতা ছাড়া কিছু নয়।
পরিহাস হলো, যে বিএনপি তাদের ভাষায় ‘অবৈধ সরকারের’ বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য ছাত্রদলের কমিটি গঠন করেছে, সেই কমিটির বিরুদ্ধে খোদ ছাত্রদলের কর্মীরাই ক্ষুব্ধ। এতে প্রমাণিত হয়, বিএনপি নেতৃত্ব শুধু জনগণের মনের ভাষা পড়তে ব্যর্থ হয়নি, কর্মীদের মনের ভাষা পড়তেও অপারগ।