সংকট সমাধানে প্রয়োজন বুদ্ধিমত্তা

কার্টুন: তুলি
কার্টুন: তুলি

মহান কমিউনিস্ট বিপ্লবী লেনিন বলেছেন, ‘যেকোনো রাজনৈতিক সংকটের উপযোগিতা রয়েছে। কারণ, যা ছিল গুপ্ত তা সংকটের সময় প্রকাশ হয়ে পড়ে।’ তাঁর এই তাৎপর্যপূর্ণ কথাটি শুধু রুশ দেশের জন্য নয়, যেকোনো দেশ ও জাতির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বাঙালি জাতির ক্ষেত্রে আরও বেশি প্রযোজ্য। বাঙালি জাতির জীবনে বারবার সংকটের সৃষ্টি হয়েছে, বলা ভালো সংকট তৈরি করা হয়েছে, তাতে অনেক গুপ্ত বিষয় প্রকাশিত হয়ে গেছে।
সংসদীয় রাজনীতির সংকটের কারণেই ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন আসে এবং অতিষ্ঠ জনগণ ‘মন্দের ভালো’ বলে সামরিক স্বৈরশাসককে মেনে নেয়। সেই শাসকও সংকট তৈরি করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে। তার ফলে দেশে ২৩ বছরের মধ্যে প্রথমবার অবাধ নির্বাচন হয় এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ তৈরি হয়। কিন্তু পাকিস্তানের নিয়তি গণতন্ত্র নয়, সামরিক স্বৈরতন্ত্র। শাসকশ্রেণী একেবারেই অযাচিতভাবে সংকট তৈরি করে একাত্তরে। মুসলমান মুসলমান যদি সত্যি ভাই ভাই হতো, তা হলে একাত্তরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের মাটি ও নদীর পানি রক্তে লাল হতো না। অত রক্ত না দিলে দেশ স্বাধীনও হতো না। স্বাধীনতা-পরবর্তী ৪২ বছরেও মাঝে মাঝে সংকট দেখা দিয়েছে। শাসকশ্রেণীর চরিত্রের গোপন দিকটির প্রকাশ ঘটেছে। তাতে জনগণের প্রয়োজনমতো সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হয়েছে। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ছিলেন ভারতবর্ষের আধুনিক যুগের একজন অবতার—মহামানব। মহামানবদের বাণী ও উপদেশ শুধু বিশেষ ধর্মাবলম্বীদের জন্য নয়, ধর্ম-বর্ণ-জাতিনির্বিশেষে সব মানুষই তা থেকে শিক্ষা নিতে পারে। পরমহংসদেব আধ্যাত্মিক, নৈতিক ও কর্মের কঠিন তত্ত্বকে সহজ-সরল ভাষায় ভক্তদের বুঝিয়ে দিতেন। তাঁর প্রায় সব কথাই অতি সহজ। যেমন সাধু সেজো না, সাধু হও, কিংবা চালাক হয়ো না, বুদ্ধিমান হও। চালাকি করে তাৎক্ষণিক কিছু সুবিধা পাওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত বিশেষ লাভ হয় না। বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজ করলে সাময়িক অসুবিধা হলেও শেষ পর্যন্ত সুফল পাওয়া যায়। শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের চালাক না হয়ে বুদ্ধিমান হওয়ার উপদেশটি ব্যক্তির ক্ষেত্রে যেমন সত্য, তেমনি রাষ্ট্রীয় জীবনেও সত্য। রাষ্ট্রীয় জীবনে তাৎক্ষণিক সুবিধার জন্য কোনো ধরনের চাতুর্যের আশ্রয় নিলে তার ফল শুভ হয় না। যাঁরা চাতুর্য করেন তাঁদের জন্যও নয়, যাঁদের বিরুদ্ধে চাতুর্য করা হয়, তাঁদের জন্য তো নয়ই। সেই অলক্ষুণে পৌষ মাসে উদ্দীনীয় সরকার আসার পর থেকেই বিএনপি-জামায়াত জোট ম্রিয়মাণ হয়ে পড়ে। ওই সিভিলিয়ান-সমর্থিত সেনা সরকার (কেউ কেউ বলেছেন সেনাসমর্থিত সরকার) এসেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের নেতাদেরই লগুড় মারতে থাকে। তাদের মূল টার্গেট ছিল বিএনপি। তাদের ধ্রুব লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে খণ্ড-বিখণ্ড করা। এবং দুই নেত্রীকে অপসারণ করা। দুই-ই তারা করতে চাইল বলপ্রয়োগ বা নির্যাতনের পথে এবং চাতুর্যের মাধ্যমে। বোকার মতো বহু রকম কারসাজি করল। রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অঢেল টাকা খরচ করে নতুন নতুন দল খাড়া করতে চাইল। দালাল তৈরি করল বিভিন্ন সেক্টরে। ভয়ে অথবা সামান্য দামে বিক্রি হয়ে গেলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক অধ্যাপক, উপসম্পাদকীয় লেখক ও গণমাধ্যমের কর্তাদের কেউ, সাংস্কৃতিক কর্মী এবং রাজনৈতিক নেতারা। সব কাজই চাতুর্যের মাধ্যমে করায় ফলটা তাঁদের জন্য শুভ হলো না। বিদেশি আনুকূল্য পেলেও দেশের মানুষের সমর্থন তাঁরা পেলেন না। পরিণতি হলো এই যে মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের পরে উদ্দীনরাই হলেন উপমহাদেশের দ্বিতীয় নির্বাসিত শাসক। বাহাদুর শাহ জাফর চিরস্থায়ী হয়েছেন রেঙ্গুনে। উদ্দীনদের ঠাঁই হয়েছে আমেরিকায়। চাতুর্য তাঁদের রক্ষা করতে পারেনি। উদ্দীনদের দুই বছরে বিএনপি নাস্তানাবুদ হয়। ভাঙতে ভাঙতেও ভাঙেনি খালেদা জিয়ার অনমনীয়তায়, যাকে তাঁর সমর্থকেরা বলেন আপসহীনতা। আইনের মাধ্যমে নয়, আইনবহির্ভূত উপায়ে তাঁর দুই ছেলের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে উদ্দীনীয় সরকার, তা ছিল মানবাধিকার লঙ্ঘন ও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন। আমি প্রথম আলোর আমার এই কলামে তার প্রতিবাদ করেছি। আর কোথাও টুঁ শব্দটিও শুনিনি। বিএনপির নেতারাও ভয়ে মুখ খোলেননি। সেই উদ্দীনীয় নির্যাতন এবং তাদেরই করা নির্বাচনে বিএনপির অকল্পনীয় বিপর্যয়ে দলটি খুবই বেকায়দায় ছিল। মহাজোট ক্ষমতায় আসার পরও বছর দুই তারা কোনো বড় কর্মসূচি দিতে পারেনি। বিরোধী দলের ওই দুর্বল অবস্থানের সুযোগে আওয়ামী লীগের উচিত ছিল বিএনপিকে আস্থায় রেখে নিজেদের নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো যথাসাধ্য বাস্তবায়ন করা। তাতে বিএনপি দুর্বল অবস্থানেই থাকত এবং আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হতো। কিন্তু সরকারের নীতিনির্ধারকেরা চাতুর্যের আশ্রয় নিলেন। বিএনপিকে শেষ করতে হবে। বিরোধী দলকে শেষ করার বুদ্ধি হলো মোনায়েম খানি বুদ্ধি। গভর্নর মোনায়েম আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবকে শেষ করতে চেয়েছিলেন। তাঁর সেই পরিকল্পনার ফল তিনি নিজে আংশিক দেখে গেছেন, ২০০৮ পর্যন্ত বেঁচে থাকলে পুরোটা দেখতেন। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন যেদিন হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেন, সেদিন সন্ধ্যায় সাংবাদিকেরা আমার মতামত জানতে চান। আমি আমার মতামত দেওয়ার সময় প্রশ্নকর্তাদের কাছে জানতে চেয়েছিলাম, যদি আজ এই রায়টি না হতো? অথবা যদি জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে তরিকতি নেতা মৌলভি চাঁদপুরীসহ ২৫ জন আদৌ রিট না করতেন? রায় এখন না হয়ে চার মাস পরে হতো? এই রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের মুখপাত্রদের সন্তোষ প্রকাশ করতে দেখেছি। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ এমন কথাও বলেছেন, তাঁদের প্রাথমিক ‘বিজয়’ অর্জিত হয়েছে এই রায়ের মাধ্যমে। নিবন্ধন বাতিলের পরবর্তী ধাপ জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা। জামায়াত নিষিদ্ধ হলে কে বেশি লাভবান হবে, তা নিয়ে মিডিয়া আলোচনা করছে। আইনগত দিক নিয়েও আলোচনা হচ্ছে। আমাদের সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মিডিয়ায় টক শোতে চুটিয়ে মতামত দিচ্ছেন। কিন্তু দেখা গেল, তাঁদের অনেকের কথা মূল জায়গায় এসে গলায় যেন আটকে যাচ্ছে। কারও কারও কথা বিয়ের পর প্রথম শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে নতুন জামাইয়ের মতো। খুব স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেন না। কোন কথার অর্থ কী দাঁড়ায়।
নির্বাচন কমিশনের উকিল বলেছেন, ‘জামায়াত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।’ জামায়াত দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ না নিলেও এবং চিরকাল নিষিদ্ধ থাকলেও, তাদের সমর্থকদের ভোট দেওয়ার ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। যেহেতু তা হয়নি, সুতরাং জামায়াতপন্থী মানুষেরা নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং ব্যালট পেপারে সিল/ক্রস যা হোক কিছু একটা দেবেন। এবং সেই সিল/ক্রস যে আওয়ামী লীগ, জাসদ বা ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থীর মার্কায় পড়বে না তাতে সন্দেহ কী? রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, ‘আমরা চাইব রায়ের কপি দ্রুত নির্বাচন কমিশনে আসুক, সবকিছু নির্ভর করছে কপি পাওয়ার পর।’ নির্বাচন কমিশন যদি তার কঠিন দায়িত্ব পালন করত, তা হলে জামায়াতের নিবন্ধনের বিষয়টি কোর্টকাছারি পর্যন্ত গড়াত না। সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়া সত্ত্বেও কেন নির্বাচন কমিশন জামায়াতকে নিবন্ধন দিয়েছিল? সোজা কথাটা বললে দাঁড়ায় এই: নির্বাচন কমিশন অবৈধভাবে জামায়াতকে নিবন্ধন দিয়েছিল। তা হলে দোষটা কার ঘাড়ে বর্তায়? দক্ষিণ-পশ্চিম বাংলার সশস্ত্র বিপ্লবী মাওবাদী কোনো দলকে যদি নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেয়, তাতে ওই দলের কমরেডদের দোষ কী? জামায়াতে ইসলামী তার জন্মের পর থেকে এর আগে তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছে। ১৯৫৯-এ, ১৯৬৪-তে এবং ১৯৭২-এ। তিনবার একই কারণে নিষিদ্ধ হয়নি। তিন কারণে হয়েছে। এবার চতুর্থ কারণে নিষিদ্ধ হলো। তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে আদালত বলছেন, ‘বাই মেজরিটি, রুল ইজ মেইড অ্যাবসলিউট অ্যান্ড রেজিস্ট্রেশন গিভেন টু জামায়াত বাই ইলেকশন কমিশন ইজ ডিক্লেয়ার্ড ইললিগ্যাল অ্যান্ড ভয়েড।’ রায়ের পর ১৮-দলীয় জোট থেকে বলা হয়েছে, ‘এ রায়ে জামায়াতকে সাংগঠনিকভাবে নিষিদ্ধ করার পথ প্রশস্ত হয়েছে এবং এক ধাপ এগিয়েছে।’ এক দিন পরই স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার চিন্তা করছে না সরকার। জামায়াত নিষিদ্ধের পরিকল্পনা সরকারের নেই।’ অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, জামায়াতের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের এ দেশে থাকার অধিকার নেই। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের সংবাদ আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তারা আখ্যায়িত করেছে ‘বাংলাদেশের বৃহত্তম ইসলামি দলকে’ নিষিদ্ধ করা বলে। যদিও ইসলামি দল হিসেবে জামায়াত নিষিদ্ধ হয়নি। দেশে অনেক ইসলামি দল ও সংগঠন রয়েছে। আওয়ামী লীগপন্থী ইসলামি মৌলবাদী সংগঠনের সংখ্যাও কম নয়। যদিও আওয়ামী লীগ যেসব ইসলামি মৌলবাদী সংগঠনের নেতাদের ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা দেয়, সেগুলো জামায়াতের চেয়ে কম প্রতিক্রিয়াশীল নয়। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের কথা ঘোষণামাত্র পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামীর আমির সাহেবের কলিজায় সবচেয়ে বেশি আঘাত লেগেছে। পাকিস্তানিরা বীর যোদ্ধার জাতি। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের সঙ্গে সঙ্গে এক বিবৃতি দেন পাকিস্তানি জামায়াত নেতা। তবে তিনি বন্দুকটা তাক করেছেন ভারতের দিকে। বুজুর্গ নেতা বলেছেন, ‘ভারতের নির্দেশে হাসিনা ওয়াজেদ জামায়াতকে জনবিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে এবং দলকে ধ্বংস করার চেষ্টা করছে।’ পাকিস্তানের জামায়াতের বুজুর্গ নেতা ভারতকে নিষেধাজ্ঞার জন্য দায়ী করলেও, গণতান্ত্রিক ভারতের একটি নীতিনির্ধারণী দৈনিক তার সম্পাদকীয়তে লিখেছে: ‘কোনও রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের মত পছন্দ না করিলে বা তাহাকে অন্যায় মনে করিলে নিষেধাজ্ঞাই কি যথাযথ উপায়? ইতিহাসের সাক্ষ্য ইহার বিপরীতই। দমন-পীড়ন, নিষেধাজ্ঞা রাজনৈতিক দলকে আত্মগোপন করিতে বাধ্য করে বটে, কিন্তু নিষিদ্ধ দলের নেতা-কর্মীরা জনসাধারণের চোখে বীরের কিংবা নিহত হইলে শহিদের মর্যাদা পান। তাহাতে তাঁহাদের জনপ্রিয়তা, প্রাসঙ্গিকতা আরও বৃদ্ধি পায়। গোপনে, লোকচক্ষুর অন্তরালে, সরকারি নজরদারি ও প্রহরা এড়াইয়া নিষিদ্ধ দলটি সমাজে দ্রুত বৈধতা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করিতে থাকে। দেশে দেশে বিপ্লবী কিংবা মৌলবাদী ধর্মীয় সংগঠনগুলো এভাবেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করিয়া শাসকদের ঘুম কাড়িয়া লইয়াছে। বাংলাদেশে জামাতে ইসলামিকে নিষিদ্ধ করিলেও তাহার জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়াইয়া দেওয়া হইবে। জামাতে ইসলামির মতামত ও ক্রিয়াকলাপের মোকাবিলা যদি করিতে হয়, তবে গণতান্ত্রিক পথেই তাহা করণীয়, সেজন্য তাহাকে প্রকাশ্যে রাজনীতি করিতে দেওয়া উচিত।’ [‘নিষেধাজ্ঞা নয়’ আনন্দবাজার পত্রিকা, ৩ আগস্ট] ভারতের প্রভাবশালী কাগজটি এ কথাও যোগ করেছে যে, ‘এই দল নির্বাচনে যোগ দিতে না পারিলে বা নিষিদ্ধ হইলে বিএনপির ভোটবাক্সে তাহার প্রভাব পড়িবার সম্ভাবনা প্রবল। সেই প্রভাব দেশের ধর্মনিরপেক্ষ শক্তির অনুকূল হইবে বলিয়া মনে হয় না।’ মহাজোটের প্রাজ্ঞ নেতারা ভাবছেন বিপরীত কথা। জামায়াত নিষিদ্ধ হলেই তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। একটি চরম প্রতিক্রিয়াশীল, উগ্র, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্যযুগপন্থী মৌলবাদী সংগঠনকে, যার জনসমর্থন ৩-৪ শতাংশের বেশি নয়, তাকে নিয়ে সরকার এত বেশি ব্যস্ত না হলেই পারত। জামায়াতের সঙ্গে অতীতে দোস্তি কেউ কম করেননি। ভোটের রাজনীতিতে ভবিষ্যতে জামায়াতিদের সঙ্গে আবারও যে মিত্রতা যে কোনো দলের হবে না, তা তিন দিব্যি দিয়ে কেউ বলতে পারে না। তবে তখন আওয়ামী লীগ নেতারা বলবেন, আমরা তো নিবন্ধন বাতিল করি নাই বা নিষিদ্ধ করি নাই। কোর্ট করেছেন। আমরা মামলাও করি নাই, কোথাকার কোন তরিকত-হকিকতের কেউ করেছিল। মহাজোটের নির্বাচন কমিশন বলবে, আমরা তো নিবন্ধন দিয়েইছিলাম। তা বাতিল করেছেন আদালত। সবাই নিরাপদে থাকবেন। সব দায় গিয়ে পড়বে আদালতের কাঁধে। যেমন এখন অব্যাহত বলা হচ্ছে, তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা তো আমরা বাতিল করি নাই, আদালতের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি মাত্র। সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংকট এখনো জটিলতর হয়নি। সময় আছে সমাধানের। তবে তা চাতুর্য দিয়ে হবে না। বুদ্ধিমত্তা ও দূরদৃষ্টি দিয়ে সম্ভব। নীতিনির্ধারকদের কাছে আমাদের আকুল অনুরোধ, চাতুর্যের প্রয়োজন নেই, বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিন।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।