জামায়াতের হরতাল

গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর দেশবাসী আশা করেছিল, হরতাল-অবরোধের পর্ব আপাতত শেষ হয়েছে। বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপারসন ও ১৯-দলীয় জোটের নেতা খালেদা জিয়াও সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, দেশের মানুষের কষ্ট হয়, অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়—এ রকম কর্মসূচি তাঁরা দেবেন না। বিএনপি নেত্রীর এই অবস্থানকে সবাই সাধুবাদ জানিয়েছে।
কিন্তু ১৯-দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামী ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় নিম্ন আদালত দলের আমির ও সাবেক মন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামীসহ ১৪ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে আগামী বৃহস্পতিবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি নিয়েছে। তাদের এই কর্মসূচি যেমন দেশ ধ্বংসকারী, তেমনি উসকানিমূলক। ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামে যখন ১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের ঘটনা ঘটে, তখন মতিউর রহমান নিজামী শিল্প মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। যে ঘাট থেকে এই অস্ত্র চালান হতে যাচ্ছিল, সেই ঘাট শিল্প মন্ত্রণালয়েরই অধীন। তাই তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এ সম্পর্কে কিছুই জানতেন না—সেই দাবি ধোপে টেকে না। দ্বিতীয়ত, বিচারিক বিষয় নিয়ে রাজপথ উত্তপ্ত করা কিংবা জনগণকে জিম্মি রাখা স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ।
১০ ট্রাক অস্ত্র আটকের মামলায় নিম্ন আদালত যে রায় দিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ আছে। বিচারে দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মতিউর রহমান নিজামী নিজেও উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা বলেছেন। তাহলে হরতাল ডেকে জনগণকে কষ্ট দেওয়ার কী কারণ থাকতে পারে?
৫ জানুয়ারির আগে হরতাল-অবরোধের নামে এই মৌলবাদী দল কী ধরনের নাশকতা ও সহিংসতা চালিয়েছে, তা কারও অজানা নয়। বিরোধী দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যে সফল হতে পারেনি, তার মূলেও রয়েছে দলটির সন্ত্রাসী তৎপরতা। সামনে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচন একতরফা হলেও উপজেলা নির্বাচনে সব দলের সমর্থক প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ অবস্থায় হরতাল আহ্বানের একটিই উদ্দেশ্য হতে পারে, রাজনৈতিক অঙ্গনে ফের অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করা। এটি দেশবাসী মেনে নেবে না। তাই, জামায়াতের নেতৃত্বের উচিত হবে নিজেদের আরও বিতর্কিত না করে এই ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিটি প্রত্যাহার করে নেওয়া।