বিচ্ছিন্নতাবাদীদের রুখতে অনেক কিছু করেছে বাংলাদেশ

কঙ্কন আচার্য
কঙ্কন আচার্য

প্রথম আলো : আসামের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন?
কঙ্কন আচার্য : আসামের রাজনীতি এখন অস্থির। কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর সরকারের মধ্যে অনেক বিরোধ রয়েছে। মন্ত্রীরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। এই সরকার এখন একপ্রকার চলত্শক্তিরহিত। আসামের সাধারণ মানুষ অত্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ। হিন্দু-মুসলিম, আদিবাসী সবাই ধর্মনিরপেক্ষ। আসামে ৩৩ শতাংশ মুসলিম। তারা উদারনৈতিক ইসলামের চর্চা করে। অথচ এখন ধর্মের ভিত্তিতে ভোটের রাজনীতি বিভক্ত ও মেরুকরণকৃত হয়েছে। 
প্রথম আলো: এটা কি আগে দেখা যায়নি?
কঙ্কন আচার্য : কখনোই নয়। আসামের ইতিহাসে এটা একদম নতুন ঘটনা। বিজেপি এই প্রথম লোকসভা নির্বাচনে আসাম থেকে সাতটি আসন পেয়েছে। 
প্রথম আলো: কথিত অনুপ্রবেশ ইস্যু কতটা প্রভাব ফেলেছে?
কঙ্কন আচার্য: ফেলেছে। কিন্তু সেটাই একমাত্র বিষয় নয়। সরকারি অর্থের অপব্যবহার ও অব্যবস্থাপনার কারণে আসামের কংগ্রেস সরকারের ওপর মানুষ অনেকটাই ক্ষুব্ধ। আসামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানরা জিহাদিদের সমর্থন করে না। পছন্দ করে না। অথচ একটি ভুল ধারণা সৃষ্টি করা হচ্ছে যে জিহাদিরা শক্তিশালী হয়ে উঠছে। আর এটা কেবল আসাম নয়, গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতকে অশান্ত করে তুলছে। বিরাট অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে।

প্রথম আলো:  বর্ধমান-কাণ্ডের সঙ্গে আসামের সংশ্লিষ্টতার একটা ধারণা করা হচ্ছে।
কঙ্কন আচার্য : আসামের একটি গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে সন্দেহ করা হয়েছে। সুজানা বেগম নামের একজন আসামে গ্রেপ্তার হয়েছেন। বলা হচ্ছে সুজানা বর্ধমান-কাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে মিলে এমন একটি ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন, যাঁর লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়া উভয়কে হত্যা করা। এসবের কারণে রাজ্য সরকার ও জনগণের মধ্যে একটা আতঙ্কের ভাব চলে এসেছে। 
প্রথম আলো l সরকার ও মিডিয়ার তরফে যেসব তথ্য এসেছে, তার সত্যতা কতটুকু মনে হয়?
কঙ্কন আচার্য : কিছু সত্যতা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। তবে এটা এমন কোনো উল্লেখযোগ্য বিষয় নয়, যা কিনা সমাজে একটা মেরুকরণ এনে দিতে পারে।
প্রথম আলো : আসাম ও সিলেটের মতো সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মধ্যে পণ্য চলাচল কী রকম মনে হয়?
কঙ্কন আচার্য : আনুষ্ঠানিক ব্যবসা-বাণিজ্য অনেকটাই বেড়েছে। কিছু বাংলাদেশি পণ্য ভোক্তাদের মধ্যে বিশেষ চাহিদাও সৃষ্টি করেছে।
প্রথম আলো : উভয় অঞ্চলের মধ্যে লোক চলাচল?
কঙ্কন আচার্য : বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও আসাম থেকে কম লোক আসছে।
প্রথম আলো : উলফা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তত্পরতা এখন কী রকম?
কঙ্কন আচার্য : উলফার তত্পরতা অনেক হ্রাস পেয়েছে। তাদের অনেকে কারাগারে। উলফা বিভক্ত হয়ে গেছে। অরবিন্দ রাজখোয়া, শশধর চৌধুরী প্রমুখ এখন সরকারি ক্যাম্পে আছেন। অন্যদিকে পরেশ বড়ুয়ার নেতৃত্বাধীন একটি গোষ্ঠী চীন-মিয়ানমার সীমান্তের রুইলিতে রয়েছে বলে মনে করা হয়।
প্রথম আলো : উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কোন্নয়নে আসামের মিডিয়া কী ভূমিকা রাখতে পারে? 
কঙ্কন আচার্য : আগে একটি বড় সমস্যা ছিল উলফা নেতা পরেশ বড়ুয়া ঢাকায় ছিলেন। তিনি বা তাঁর মতো অন্য কোনো নেতাই তো আর এখানে কোনো গুরুত্ব পাচ্ছেন না। তবে অনুপ্রবেশ নিয়ে আসামের সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা ভীতি আছে। কারণ, তারা মনে করে যে রাজ্যের জনসংখ্যাতাত্ত্বিক অবস্থান অনেকটাই বদলে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সংখ্যালঘু হয়ে গেছে। অনুপ্রবেশ একটি অর্থনৈতিক সমস্যা। আর এটা কেবল আইন করে মোকাবিলা করা যাবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে করতে হবে। কারণ বেশি আইন করে প্রতিহত করার মানে হলো ঔপনিবেশিক ধ্যানধারণাকে প্রশ্রয় দেওয়া। কোনো সমস্যা হলেই তারা সমস্যা সমাধানের চেষ্টা না করে একটি আইন করে দিত। সেটা পরিহার করে ভারত যদি ওয়ার্ক পারমিটের মতো ব্যবস্থা চালু করে, তাহলে তা অধিকতর সুফল দিতে পারে। 
অন্যদিকে জিহাদি ইস্যু ভেতরে ভেতরে অনেক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। বিশ্বাসের ভিত নষ্ট করেছে। অথচ এই আসাম এমন ছিল না। বাবরি মসজিদের ঘটনায় সারা দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু আসামে হয়নি। সে সময় মুসলিমদের চেয়ে অনেক বেশি হিন্দু এর প্রতিবাদ জানিয়েছিল। 
প্রথম আলো : বিচ্ছিন্নতাবাদী তত্পরতা রোধে বাংলাদেশের আর কী করণীয় আছে?
কঙ্কন আচার্য : বাংলাদেশ অনেক কিছু করেছে।
প্রথম আলো : সেই উপলব্ধিটা কি আসামের সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে?
কঙ্কন আচার্য : আমার ধারণা আছে। দেখুন, যদি সম্পর্ক ভালো না হয়, তাহলে অর্থনৈতিক সম্পর্কে উন্নতি হলেও তাতে তেমন লাভ হয় না। তাই আমি মনে করি অভিবাসন বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটা আশু সমঝোতা হওয়া দরকার।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
কঙ্কন আচার্য : ধন্যবাদ।