মহাবিপর্যয়ের মুখে সুন্দরবন

সুন্দরবনের শ্যালা নদীতে একটি জাহাজ ডুবে সাড়ে তিন লাখ লিটারের বেশি তেল ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই শ্বাসমূলীয় বনের গাছপালা, ডলফিন, মাছ ও বন্য প্রাণীর জন্য এক মহাবিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কারণ, পানিতে তেলের আস্তরণ প্রাণের অস্তিত্বের জন্য বিরাট হুমকি। আশ্চর্যের বিষয় হলো, দুর্ঘটনার পর ১২ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কিছু জানতেন না। জাহাজ উদ্ধার ও তেল অপসারণের কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। অর্থাৎ এ ঘটনার বিপর্যয়ের দিকটি বোঝার সক্ষমতাও ওদের নেই। এদের দিয়ে দেশের কোন উপকারটা হবে?
সুন্দরবনে ছড়িয়ে পড়ছে তেল প্রথম ও প্রধান প্রশ্নটি হলো সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে নৌ চলাচল করে কীভাবে? এটা তো সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এর জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য বনের ভেতর দিয়ে পণ্য পরিবহনের জাহাজ চলাচল দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ। অথচ এখন প্রতিদিন সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে দেড় শ থেকে আড়াই শ জাহাজ চলছে। জাতিসংঘের জলাভূমিবিষয়ক সংস্থা রামসার কর্তৃপক্ষ আপত্তি জানিয়েছে, ইউনেসকোরও আপত্তি আছে। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নিজে নৌপথটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু কোনো ওষুধেই কাজ হচ্ছে না।
এটা অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন অধিদপ্তরের ঔদ্ধত্য ছাড়া আর কিছু নয়। যেখানে সুন্দরবন বিশ্ব-ঐতিহ্যের অংশ, সেখানে একটি সরকারি সংস্থা সবকিছু উপেক্ষা করে কীভাবে দিনের পর দিন পরিবেশ ধ্বংস ও দেশের সুনাম নষ্ট করার এ অপকর্মটি করে চলেছে? তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নোটিশ দিয়ে আইনের আওতায় আনুন। দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তি দিন।
জলবায়ু বিপর্যয়ের এই দুঃসময়ে যখন সারা বিশ্ব বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য মাথা কুটে মরছে, তখন আমাদের দেশের কিছু কর্ণধারের চরম ঔদাসীন্যে সুন্দরবন ধ্বংস হচ্ছে। বিশ্ববাসী বাংলাদেশকে চেনে বেঙ্গল টাইগার দিয়ে। বিপন্ন প্রজাতির সেই বাঘের বংশ ধ্বংসের নতুন এই উপদ্রব শুরু করেছে নৌপরিবহন অধিদপ্তর। এদের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ না করলে সুন্দরবন বাঁচবে না।