ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী সমর্থকদের বিভাজনের রাজনীতির লাগাম টেনে ধরবেন—এমন আশাবাদ তিরোহিত হওয়ার ঝুঁকির মুখে। ফলে তিনি অর্থনৈতিক সংস্কারের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজে মন দেবেন, সে আশাও করা যাচ্ছে না। এর দায় সরাসরি মোদির ওপরেই বর্তায়।
গত মঙ্গলবার শেষ হওয়া ভারতের লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের কাজই যথাযথভাবে করা যায়নি। সে অধিবেশন বারবার মুলতবির কারণে এসব গুরুত্বপূর্ণ কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে। ভারতের বিভিন্ন স্থানে উগ্র হিন্দু গোষ্ঠীগুলো খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের হিন্দুধর্মে ধর্মান্তরিত করেছে। এ বিষয়টি নিয়ে সংসদে ব্যাপক শোরগোল হয়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘ ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ‘ঘরে ফেরা’ প্রচারণা শুরু করার পর বিষয়টি সংকটের পর্যায়ে পৌঁছে। এসব গোষ্ঠী ধর্মনিরপেক্ষ ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র বানাতে চায়। তারা খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের পুনর্ধর্মান্তরিত করতে চায়।
সম্প্রতি ভারতের আগ্রা এবং গুজরাট ও কেরালা রাজ্যের কিছু জায়গায় উগ্র হিন্দু গোষ্ঠী কিছুসংখ্যক মুসলমান ও খ্রিষ্টানকে হিন্দু বানিয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, তাদের একাধারে ভয় ও লোভ দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। ভয়ভীতি যেমন দেখানো হয়েছে, তেমনি
তাদের খাদ্য ও রেশন কার্ড দেওয়া হবে—এমন লোভও দেখানো হয়েছে। পুলিশ এসব অভিযোগের তদন্ত করছে। খ্রিষ্টান ও তাদের ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে বেড়ে গেছে। ১ ডিসেম্বর দিল্লির সবচেয়ে বড় গির্জাগুলোর একটি আগুনে পুড়ে যায়। গির্জাটিতে আগুন লাগানো হয়েছিল বলেই অভিযোগ। আর ১২ ডিসেম্বর হায়দরাবাদে ক্রিসমাসের গান গেয়ে বাড়ি ফেরার পথে মানুষের ওপর হামলা করা হয়েছে।
ভারতের জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশের বেশিই হচ্ছে হিন্দু। কিন্তু সেখানে মুসলমান, খ্রিষ্টান ও শিখেরাও ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে তাদের শত শত বছরের ইতিহাস রয়েছে। দেশটির সংবিধান ধর্মীয় বহুত্ববাদ ও স্বাধীনতার সুরক্ষা দিয়েছে। ভারতে ধর্মান্তরকরণের ব্যাপারটা বিরোধপূর্ণ বিষয়। বহু দলিত (যাদের আগে অস্পৃশ্য বলা হতো), অন্য নিম্নবর্ণের হিন্দু ও আদিবাসী স্বীকার করে, তারা মূলত বর্ণপ্রথার দহন জ্বালা ও নিপীড়ন সইতে না পেরে ইসলাম বা খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হয়েছে। ভারতের সংবিধানের প্রধান রূপকার ড. ভিমরাও রামজি আম্বেদকার দলিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি হিন্দুধর্মের বর্ণপ্রথার নিপীড়ন থেকে রেহাই পেতে বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছিলেন।
বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা যেমনটি দাবি করছেন, মোদির উচিত চাঙা হয়ে ওঠা হিন্দুত্ববাদীদের প্রতি নীরবতা ভেঙে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা। উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের কার্যকলাপ অর্থৈনতিক সংস্কারের পথে আরও অগ্রগতিকে গৌণ করে দিয়ে রাজনীতি ও বিভেদকে মুখ্য করে তোলার আগেই মোদিকে তা করতে হবে।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত