সামঞ্জস্যপূর্ণ বেতন

জাতীয় বেতনকাঠামোর প্রতিবেদন অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দিয়েছে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য গঠিত জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে আরও জানা গেল, নতুন বেতনকাঠামোতে ১৬টি ধাপ করার সুপারিশ করা হয়েছে। যেখানে সর্বনিম্ন বেতন স্কেল ৮ হাজার ২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এটা স্বল্প আয়ের চাকরিজীবীদের কাছে আকাশের চাঁদ হাতে পাওয়ার মতোই অবস্থা হবে, যদি এখানে কোনো কাটছাঁট করা না হয়।
বর্তমান বাজার মূল্যবৃদ্ধিতে অস্থির। সাধারণ মানুষের আয়ের সিংহভাগ অংশই শেষ হয়ে যায় দৈনন্দিন বাজার-খরচ আর চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে। যাঁরা তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির সরকারি কর্মচারী; তাঁরা যে বেতন পান, সেই বেতন দিয়ে যদি পরীক্ষামূলকভাবে এক মাস চলার কথা ভাবা হয়, তবে পরীক্ষালব্ধ ফল দেখা যাবে, ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি।’
নানাবিধ চাহিদার ভিড়ে হিমশিম খেতে হবে সারা মাস। আর তাই সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার তাগিদে বেতন দ্বিগুণ পরিমাণে বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
যদি সুপারিশ অনুযায়ী সর্বনিম্ন বেতন হয় ৮ হাজার ২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ বেতন স্কেল হয় ৮০ হাজার, তবে এই বেতন-বৈষম্যের কারণে একশ্রেণির মানুষ ততটা সচ্ছল নাও হতে পারেন। কেননা, পে স্কেল কার্যকর হওয়ার পর কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে প্রতিটা ক্ষেত্রেই এতটা প্রভাব পড়তে শুরু করবে যে সর্বনিম্ন বেতন ভোগকারীরা সেই জাঁতাকলে পড়তে পারেন। অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধির যাতনা সর্বোচ্চ বেতন ভোগকারীদের তেমন একটা স্পর্শ করবে না।
বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী যে পরিমাণ বাড়তি অর্থের বাজেটের প্রয়োজন দেখা দেবে, তার উৎসও নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কেননা, যদি খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি হয়ে যায়, তবে অর্থনীতির চাকা সচল রাখা ভবিষ্যতে অনেক কঠিন হয়ে পড়তে পারে।
বাজারের সঙ্গে বেতনও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া দরকার। মানুষের প্রকৃত বিকাশের জন্য এর বিকল্প নেই। আর তা না হলে মানুষ নানা অবৈধ উপায়ে নিজের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করবে, আর সমাজে বাড়বে নৈরাজ্য।
সঞ্জয় কুমার ভৌমিক
শ্রীমঙ্গল।