এই মৃত্যু ও সহিংসতার জবাব কী?

শিক্ষিকা শামছুন নাহারের সঙ্গে স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়ের সম্পর্ক থাকলেও রাজনীতির কোনো সম্পর্ক ছিল না। গত সোমবার হরতালের সময় তিনি কাভার্ড ভ্যানে করে স্বামী-সন্তানসহ নোয়াখালী থেকে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু রাজনীতি তাঁর জীবন কেড়ে নিয়েছে। হরতালকারীদের নিক্ষিপ্ত ইটের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। রাজনীতির সঙ্গে যোগসূত্র ছিল না জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজিমুল হকেরও। হরতালের আগের দিন রাত আটটায় তিনি মাকে নিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় মিরপুরে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে মা ও ছেলে এখন হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন।
ইটের আঘাতে শিক্ষিকা নিহতবিএনপিসহ ২০-দলীয় জোট সোমবার হরতাল ডেকেছিল দলীয় নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে এবং খালেদা জিয়াকে গাজীপুরে জনসভা করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে। শিক্ষিকা শামছুন নাহার কিংবা ছাত্র তানজিমুল হক তাদের কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছেন, এমন দাবি কেউ করবেন না। তার পরও তাঁদের একজনকে জীবন দিতে হলো, আরেকজন হাসপাতালের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছেন। বিরোধী দলের ভাষায় ‘নিরীহ’ এবং সরকারি দলের ভাষায় ‘প্রত্যাখ্যাত’ হরতালে আরও অনেক অঘটন ঘটেছে, যার শিকার হয়েছে সাধারণ মানুষ।
এটি কী ধরনের রাজনীতি? কী জবাব এই মৃত্যুর? রাজনীতির নামে এই সহিংসতা আর কত দিন চলবে? যে রাজনীতি জনগণের কল্যাণের জন্য, সেই রাজনীতি কেন মানুষকে এভাবে মৃত্যুর মুখে এবং দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে? বিরোধী দল বরাবরই দাবি করে আসছে, তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু হরতালের আগের দিন অটোরিকশায় আগুন দেওয়া কিংবা কাভার্ড ভ্যানে ইট মেরে মানুষ হত্যা কী ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি? যে বা যারাই এসব অপরাধের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
আর বিরোধী দলের হরতালে যাঁরা রাজপথ দখল করে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করেন, তাঁদের বলব, পেশিশক্তি পরিহার করুন। রাজনৈতিক সমস্যার রাজৈনতিক সমাধান খুঁজে বের করুন।