শিশুদের স্কুলে যেতে দিন

বছরের প্রথম দিনেই নতুন বই পেয়ে স্কুলের শিশুরা যতটা খুশি হয়েছিল, এখন হরতাল-অবরোধের জন্য স্কুলে যেতে না পেরে তার চেয়েও বেশি কষ্ট পাচ্ছে। প্রতিবছর এই জানুয়ারি মাসটা তাদের আনন্দে-উত্তেজনায় কাটে। নতুন শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দে কিছু সময় কাটানোর সুযোগ থেকে ওরা বঞ্চিত হচ্ছে। ওদিকে স্কুলও খোলা রাখা হচ্ছে। ফলে একদিকে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে, অন্যদিকে স্কুলে অনুপস্থিতির হার বাড়ছে। এর দায় শিক্ষার্থীদের ওপরই বর্তাবে। কারণ, বছর শেষে হিসাবের খাতায় কম উপস্থিতি দেখানো হলে সেটা তাদের জন্য বড় সমস্যা হয়ে উঠবে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট লাগাতার অবরোধের মধ্যেও মাঝে মাঝে হরতালের ডাক দিচ্ছে। যখন বলে, রাজপথ, রেলপথ, নৌপথ অবরোধ, তখন শহরের ভেতরেও পেট্রলবোমা ছুড়ে গাড়ি-বাস পুড়িয়ে দেওয়া হয়। হরতালের মধ্যেও একই আচরণ। সন্তানদের স্কুলে যেতে দেওয়া না-দেওয়া নিয়ে অভিভাবকেরা আতঙ্কে রয়েছেন।
রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদ-আন্দোলনের অধিকার আছে। কিন্তু লাগাতার কর্মসূচির ক্ষেত্রে নাগরিকদের পাশাপাশি শিশুদের সুবিধা-অসুবিধার কথা যেকোনো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের বিবেচনায় রাখতে হবে। মৌলিক অধিকার থেকে কাউকে বঞ্চিত করা যাবে না।
অন্যদিকে, সরকারেরও দায়িত্ব আছে। আন্দোলন দমনের জন্য বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা, গ্রেপ্তার, পুলিশি নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে পুলিশ, প্রশাসন ও সরকারদলীয় নেতা-কর্মীদের মারমুখী আচরণ বিরোধী দলকে হরতাল-অবরোধের মতো চূড়ান্ত কর্মসূচির পথে ঠেলে দিচ্ছে। তাই সরকারও দায় এড়াতে পারে না।
মধ্যবর্তী নির্বাচন হবে কি না, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, না কার অধীনে হবে—এসব বিতর্কিত বিষয়ের সুরাহার জন্য রাজপথে যাওয়ার দরকার নেই। আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান সম্ভব। একদিকে সরকারি দমন-পীড়ন ও অন্যদিকে হরতাল-অবরোধ বন্ধ করে অবিলম্বে আলোচনার পথ প্রশস্ত করুন। শিশুদের লেখাপড়া করতে দিন। দেশবাসীকে স্বস্তি দিন।