জনগণের নিরাপত্তা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থা চলমান থাকার প্রেক্ষাপটে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ‘যেকোনো মূল্যে’ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার যে নির্দেশ দিয়েছেন, তা উদ্বেগজনক। বাংলাদেশের সংবিধান ও প্রচলিত আইন–কানুনে রাষ্ট্রীয় জীবনে সম্ভাব্য যে পরিস্থিতিরই উদ্ভব হোক না কেন, সেটি কীভাবে মোকাবিলা করতে হবে, তাও নির্দিষ্ট করে বলা আছে। বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক ও সভ্য সমাজেও যা প্রযোজ্য। কোনো দেশের সংবিধান এটা বলেনি যে রাষ্ট্রের জীবনে এমন অবস্থা আসতে পারে, যখন কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে আইনের ঊর্ধ্বে ওঠার প্রয়োজন পড়তে পারে।
প্রধানমন্ত্রী সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন ও বিচলিত থাকবেন, সেটা স্বাভাবিক। কিন্তু ‘যেকোনো মূল্যে’ পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সরকারপ্রধান হিসেবে পুলিশকে সেই ‘স্বাধীনতা’ দেওয়ার সুযোগ প্রধানমন্ত্রীর নেই। এ রকম কোনো সুযোগ প্রচলিত আইন কারও জন্যই সৃষ্টি করে রাখেনি। এ ধরনের মনোভাবের সঙ্গে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের জবানিতে সাম্প্রতিক কালে উচ্চারিত কিছু সংবেদনশীল ঘোষণার সম্পর্ক রয়েছে কি না, তাও ভাবনার বিষয়।
পুলিশকে যেকোনো ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীরআমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি যে বিরোধী দলের চাপিয়ে দেওয়া অবরোধের মধ্যে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড এবং জনমনে ভোগান্তি ও ভয়ভীতি অব্যাহত রয়েছে। এই অবস্থা থেকে মানুষ রেহাই চায়। কিন্তু সেটি করতে হলে জনগণকে আস্থায় নিয়েই করতে হবে। কিন্তু সে বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পেরেছে বলা যাবে না। এর প্রমাণ বহুলালোচিত আইনশৃঙ্খলাসংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি, পুলিশ ও র্যাব পৃথকভাবে পুরস্কার ঘোষণার পরও জনগণের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়া। অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দুএকটি ব্যতিক্রম ছাড়া সন্ত্রাসী-নাশকতাকারীদের ধরতে পারছে না।
অতএব, সরকারকে বুঝতে হবে সমস্যাটি রাজনৈতিক। তাই যেকোনো মূল্যে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা না করে জনগণের নিরাপত্তা বিধানে আইনের শাসনের শর্ত পূরণ করুন। ভাবুন রাজনৈতিক সমাধানের কথাও।