পেট্রলবোমা ও 'বন্দুকযুদ্ধ'

সারা দেশে মানুষ পুড়িয়ে মারা ও অব্যাহত নাশকতার মধ্যে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রাণহানির আরেকটি উদ্বেগজনক উপাদান যুক্ত হয়েছে। একদিকে দেখা যাচ্ছে পেট্রলবোমা বা ককটেল নিক্ষেপের মতো বর্বরোচিত নাশকতা বন্ধ হচ্ছে না। সরকারি দল ও বিরোধী দল এই নাশকতার দায় পরস্পরের বিরুদ্ধে চাপানোর চেষ্টা করলেও কোনোভাবেই মানুষকে স্বস্তি দিতে পারছে না, বরং নিরাপত্তাহীনতার বোধকে তীব্রতা দিচ্ছে। বিরোধী দল এটা অস্বীকার করতে পারে না যে, তাদের ‘বিচার-বিবেকহীন’ অবরোধ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করেই পেট্রলবোমা এবং তারপর তথাকথিত ‘বন্দুকযুদ্ধ’ প্রত্যাবর্তন করেছে। হিংসা কেবল হিংসারই জন্ম দিতে পারে।
এটা লক্ষণীয় যে, বেশ কিছুদিন ‘বন্দুকযুদ্ধ’ গণমাধ্যমে পৌনঃপুনিক শিরোনাম হিসেবে অনুপস্থিত ছিল, এবারে তা দৃশ্যত রাজনৈতিক মাত্রায় ফিরে এসেছে। এটা সবচেয়ে ভয়ের বিষয় যে, গত কয়েক সপ্তাহের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ যাদের প্রাণ গেছে তাদের বেশির ভাগই বিরোধীদলীয় রাজনৈতিক কর্মী। তাই সরকারকে বাড়তি সচেতন থাকতে হবে যে, দেশে-বিদেশে এই বিষয়টি কোনো গুরুতর ভুল বার্তা পৌঁছে দেয় কি না। নিরাপত্তা হেফাজতে যে কারও হত্যার শিকার হওয়া মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলেই গণ্য হয়। কিন্তু তার ওপরে যদি একটি চরম রাজনৈতিক সংকটকালে বিরোধীদলীয় প্রতিপক্ষকে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে অবদমনে সরকারি বাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে, তাহলে সরকারের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তিকে তা আরও নাজুক করতে পারে। ছাত্রশিবিরকে তাদের নেতা-কর্মী ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হত্যার শিকার হওয়ার পরে পৃথকভাবে হরতাল ডাকতে দেখা গেছে।
বিরোধী দলকেও এটা বুঝতে হবে যে, তাদের আন্দোলন জনসম্পৃক্ত ও গণ-আন্দোলন না হয়ে পুরোপুরি নাশকতাধর্মী হয়ে উঠছে। আমজনতার দরকার শান্তি ও নিরাপত্তা। কোনো সন্দেহ নেই যে, হতাশাগ্রস্ত মানুষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সাফল্য দেখতে চাইবে। উভয় পক্ষকে একসঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে যে পেট্রলবোমা ও কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা দুটোই হিংসাশ্রয়ী এবং তা সমস্যার সুরাহা দিতে পারে না।