পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস

তিস্তা চুক্তির বিষয়ে যে বক্তব্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশ শুনতে চেয়েছিল, সে আশ্বাস তিনি দিতে পারেননি। ইলিশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি তুলনীয় নয়। এরপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুখ্যমন্ত্রী মমতার সঙ্গে আলোচনায় অম্লমধুর সুরে বলেছেন, পানি এলে ইলিশ যাবে। আবার নৌকা উপহার দিতে গিয়েও তিনি পুনর্বার বলেন, নৌকা যেন পানিতে চলতে পারে।
মমতার শুভেচ্ছা সফরকে বাংলাদেশের নেতারা যে গুরুত্বের সঙ্গেই গ্রহণ করেছেন, তাতে সন্দেহ নেই। বিএনপির কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাও তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশের রাজনীতির এক ক্রান্তিকালে দল-মতনির্বিশেষ সবাই মমতার কাছ থেকে তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে একটি উপযুক্ত ঘোষণা শুনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু সেটা পূরণ হয়নি।
তিস্তার পানি নিয়ে চিন্তা করবেন না: মমতা তিস্তাসহ অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীগুলোর পানিবণ্টনের মতো বিষয়ের সঙ্গে ভারত সরকারের বিদেশনীতির সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। নদীর পানিবণ্টনে রাজ্য সরকারের ভূমিকা থাকলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত দায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাঁধেই বর্তায়। সাড়ে তিন বছর আগে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তির সব ঠিকঠাক হয়েছিল। ভারতের নেতারা ও গণমাধ্যম এই ধারণাই দিয়েছে যে তৃণমূল নেত্রীর অসম্মতির কারণেই তখন তিস্তা চুক্তি হয়নি। আর এবারের আশাবাদের সময় বাংলাদেশি মুখপাত্রের বরাতে ভারতের গণমাধ্যম সতর্কতার সঙ্গে মমতার ‘ইতিবাচক’ ভূমিকা রাখার খবর ছেপেছে। আর ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী ‘কিছু কারিগরি সমস্যার’ দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। আমরা মনে করি যে চুক্তি চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল সেটার ব্যাপারে এ ধরনের ‘কারিগরি সমস্যার’ প্রশ্ন তোলা মানে চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি পিছিয়ে যাওয়া। এটা সময়ক্ষেপণেরই ইঙ্গিত দেয়।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে সেতুবন্ধ হতে চাইছেন। আমরা তাঁর এই মনোভাবকে স্বাগত জানাই। তিস্তার ব্যাপারে তিনি তাঁর ওপর ‘ভরসা’ রাখতে বলেছেন। কিন্তু সাড়ে তিন বছর আগে চূড়ান্ত হওয়া তিস্তা চুক্তির বিষয়ে যদি তিনি এখনো মনস্থির করতে না পারেন, বাংলাদেশ তাঁর ওপর কীভাবে ভরসা রাখবে?
তিস্তার বিষয়ে আমরা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট বক্তব্য চাই।