রাসায়নিক অস্ত্রে আমেরিকার আপত্তি

এভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করল কারা?
এভাবে নিরীহ মানুষ হত্যা করল কারা?

ইরাকের রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদনের কারখানাগুলোর অবস্থান সম্পর্কেও আমেরিকান গোয়েন্দারা সবকিছু জানতেন এবং রিগ্যান প্রশাসনকে তা জানাতেন। স্নায়ুগ্যাস তৈরির কাঁচামাল তারা কোন কোন উৎস থেকে সংগ্রহ করছিল, কোথায় কোন কারখানায় তারা বিষাক্ত স্নায়ুগ্যাসবাহী আর্টিলারি গোলা ও বোমা তৈরি করছিল, সেসব সম্পর্কেও তাঁরা নিয়মিত গোপন রিপোর্ট তৈরি করে ওয়াশিংটনে পাঠাতেন। ইরানের বিশাল সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে ইরাকিরা যখন নাস্তানাবুদ হচ্ছিল, তখন তারা বিষাক্ত মাস্টার্ড গ্যাস প্রয়োগ করে ইরানি সেনাদের ঘায়েল করার কৌশল নেয়। মার্কিন গোয়েন্দারা গোপন নথিতে ওয়াশিংটনকে তখন জানান, ইরাক আরও দ্রুত বিপুল পরিমাণ বিষাক্ত গ্যাস উৎপাদনের জন্য ইতালি থেকে যন্ত্রপাতি কিনতে যাচ্ছে। সাদ্দাম হোসেন প্রাণঘাতী স্নায়ুগ্যাস কেবল ইরানিদের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করেননি, নিজের দেশের কুর্দিদের ওপরও গণহত্যা চালিয়েছেন প্রাণঘাতী সারিন গ্যাস ব্যবহার করে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা সেসব কিছুই দেখেছে, কিন্তু কোনো বিরোধিতাই করেনি। কারণ তখন সাদ্দাম ছিলেন তাদের মিত্র; মিত্রের অন্যায় ধরতে নেই!

কেমিক্যাল উইপন্স কনভেনশন নামে এক আন্তর্জাতিক বিধান অনুযায়ী রাসায়নিক অস্ত্র উৎপাদন, মজুত ও ব্যবহার নিষিদ্ধ। সিরিয়া এই নিষিদ্ধ কাজ করেছে বলে ওবামা ও তাঁর মিত্ররা প্রেসিডেন্ট আসাদকে শাস্তি দিতে সিরিয়ার ওপর আক্রমণ চালাতে চাইছেন। কিন্তু সিরিয়ার পাশেই ইসরায়েল যে বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ রাসায়নিক অস্ত্রের মজুত গড়ে তুলেছে, তা নিয়ে ওবামা ও তাঁর মিত্ররা কখনো কিছু বলেন না। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর গোপন নথি থেকে ইসরায়েলের রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্রের বিরাট ভান্ডার সম্পর্কে বিশদ তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে রুশ সংবাদ পোর্টাল আরটি ডটকম। দামেস্কের কাছে বিষাক্ত সারিন গ্যাস ব্যবহারের জন্য শুধু আসাদ সরকারকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে, কিন্তু বিদ্রোহীরাও যে সারিন ব্যবহার করে থাকতে পারে, এমন অভিযোগ আমলেই নেওয়া হচ্ছে না। পশ্চিমা মূলধারার সংবাদমাধ্যমে এই অভিযোগ প্রচারও পাচ্ছে না। তার কারণ, সন্দেহ করা হচ্ছে, আসাদবিরোধী বিদ্রোহীদের বিষাক্ত রাসায়নিক অস্ত্র দিয়েছে ইসরায়েল। আসাদ সরকারকে ধ্বংস করতে আমেরিকা-ইসরায়েলের এখন আল-কায়েদা, আল-নুসরার মতো ‘ভয়ংকর’ ইসলামি সন্ত্রাসবাদীদেরও টাকা-পয়সা, আগ্নেয়াস্ত্র, এমনকি রাসায়নিক অস্ত্রের জোগান দিতেও কুণ্ঠা হচ্ছে না!

গণতন্ত্র, মানবাধিকার, শান্তি ইত্যাদি নিয়ে আমেরিকান শাসকদের সুবচনের শেষ নেই। আমেরিকা দাবি করে, এসব আদর্শেই সে বলীয়ান। কিন্তু এই মিথ্যা গৌরব যে গোটা বিশ্ববাসীকে আমেরিকার দিকে তাকিয়ে করুণ পরিহাসে বিদ্ধ করে, ওবামা ও তাঁর সভাষদ কি তা টের পান?

মশিউল আলম: সাংবাদিক।