নারী যখন ঘুষ দিতে বাধ্য

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি গবেষণা সমীক্ষায় কিছু কৌতূহলোদ্দীপক তথ্য পাওয়া গেছে, যা নিয়ে চিন্তাভাবনার অবকাশ আছে। গাজীপুর ও জামালপুর জেলার দুটি ইউনিয়নে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, ভূমি, ব্যাংক, স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন খাতে নারীদের সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষ আদান-প্রদানের যে চিত্র সংস্থাটি পেয়েছে, তাতে এ দেশের নারীসমাজের বাড়তি অসহায়ত্ব ফুটে ওঠে।
উল্লিখিত খাতগুলোতে নারীরা ব্যাপক দুর্নীতির শিকার হচ্ছেন—এটি সাধারণ বাস্তবতা। এমনকি যে দেশে নারী নির্যাতন প্রতিকারের জন্য অত্যন্ত কঠোর আইন বলবৎ আছে, সেখানে নির্যাতনের শিকার নারীকে বিচার পেতে হলে থানায় মামলা দায়ের করা থেকে শুনানি পর্যন্ত ৩০০ টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।
নারী ঘুষ দেন, কখনো কখনো নেনদুর্নীতির প্রত্যক্ষ শিকার ৬৬ জন নারীর অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করেছে টিআইবি, যাঁরা স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, এনজিও, বিচারিক সেবা, ভূমি, ব্যাংক ইত্যাদি খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে সেবা পেতে দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। দরিদ্র-নিঃস্ব নারীদের ভিজিডি-ভিজিএফ কার্ড পেতে, মাটি কাটার কাজ পেতে, এমনকি, প্রাপ্য উপবৃত্তির টাকা হাতে পেতেও ঘুষ দিতে হয়—এর চেয়ে ন্যক্কারজনক আর কী হতে পারে। সেবাব্যবস্থার স্থায়ী অংশে পরিণত হয়েছে দুর্নীতি। অত্যন্ত অসহায় কিংবা অতিমাত্রায় নাজুক বলে নারীরা এ থেকে ছাড় পান না, বরং অসহায়ত্ব আর নাজুকতার কারণেই যেন তাঁরা বেশি করে এই অন্যায়ের শিকার হন।
প্রশ্ন হলো, এমন নীতিহীনতা কী করে আমাদের রাষ্ট্রীয় সেবাব্যবস্থার স্থায়ী অংশে পরিণত হলো? টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, যাঁরা এসব দুর্নীতি করছেন, তাঁদের শাস্তি হচ্ছে না, কিংবা হলেও নামমাত্র। আমরা বলি, এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সেবাব্যবস্থাকে অনৈতিক অর্থ লেনদেনের অশুভ চক্র থেকে মুক্ত করতে হবে।