ভূমি কার্যালয়ে আগুন

এটা উদ্বেগজনক যে রাজনৈতিক সহিংসতার সুযোগে একশ্রেণির দুর্বৃত্ত বিভিন্ন জেলা-উপজেলা ও ইউনিয়নে ভূমি কার্যালয়ে আগুন দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দলিল ও রেকর্ড পুড়িয়ে দিচ্ছে। যারা ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন, নোয়াখালী সদর, ঝালকাঠিসহ আরও কয়েকটি এলাকায় ভূমি কার্যালয়ে আগুন দিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার, বিচার ও শাস্তি দিতে হবে।
দুর্বৃত্তরা মনে করে, দলিলপত্র পুড়িয়ে অন্যের জমি বা সরকারি খাসজমির দলিল জাল করে সম্পত্তি দখল করা যাবে। কিন্তু এটা কঠিন। কারণ, প্রতিটি দলিলের কপি ইউনিয়ন পর্যায়ে তহশিল কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মাস্টার রেকর্ডে সংরক্ষিত থাকে। তাই একটি কার্যালয় পুড়িয়ে সব নথি ধ্বংস করা যায় না, শুধু সম্পত্তির মালিকদের হয়রানি করা যায় হয়তো। তবে স্থানীয়ভাবে জালিয়াতির সুযোগ সৃষ্টি হয়। এটাই বা করতে দেওয়া হবে কেন?
ঝালকাঠিতে ভূমি কার্যালয়ে আগুনইউনিয়ন পর্যায়ে ভূমি কার্যালয়গুলো প্রায় অরক্ষিত থাকে। নৈশপ্রহরী নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো বরাদ্দ নেই। ফলে অনায়াসে নাশকতা করা যায়। স্থানীয় উদ্যোগে হয়তো ইউনিয়ন পরিষদের সাহায্য নেওয়া সম্ভব। কিন্তু স্থায়ী ব্যবস্থা হিসেবে প্রত্যন্ত এলাকায় ভূমি কার্যালয়ে নৈশপ্রহরী নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি উদ্যোগ দরকার।
দ্বিতীয়ত, ভূমি ব্যবস্থাপনার পুরো কার্যক্রম ডিজিটালাইজ করার প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে ঢাকার ধানমন্ডি, চট্টগ্রামের কোতোয়ালিসহ কয়েকটি এলাকায় ভূমি অফিস আংশিক ডিজিটালাইজ করা হয়েছে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলা জমির যাবতীয় তথ্য ডিজিটালাইজ করার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মাধ্যমে যেকোনো মালিক শুধু দাগ নম্বর দিয়ে অনলাইনে অনুসন্ধান করে মালিকানার বিষয়ে যাবতীয় তথ্য নিজেই জানতে পারবেন। কিন্তু জমির নিবন্ধনপ্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করে ভূমি কার্যালয়ের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে একটি সমন্বিত ব্যবস্থা না থাকলে এসবের সুফল পাওয়া যাবে না।
ভূমি কার্যালয় পোড়ানোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি এসব উদ্যোগ নিলে ভূমির মালিকানা নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা-দুর্ভোগ অনেক কমে যাবে।