সবকিছুর আগে সহিংসতা বন্ধ হতে হবে

সাবের হোসেন চৌধুরী
সাবের হোসেন চৌধুরী

সাবের হোসেন চৌধুরী। আন্তপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি এবং জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশসংক্রান্ত সর্বদলীয় গ্রুপের সভাপতির দায়িত্বও পালন করছেন তিনি। প্রথম আলোর সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতায় এসেছে নির্যাতনবিরোধী আইন, সাংসদদের আচরণবিধি, আইপিইউর ভূমিকা এবং দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি।
প্রথম আলো : ২০০৯ সালে ‘নির্যাতন এবং অন্যান্য নিষ্ঠুর অমানবিক অথবা অমর্যাদাকর আচরণ বা শাস্তির বিরুদ্ধে জাতিসংঘ সনদের কার্যকারিতা প্রদান’ শিরোনামে একটি বেসরকারি বিল আনেন এবং তা সংসদে পাসও হয়। এখন পুলিশ বিভাগ থেকে সেই আইন সংশোধনের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আপনার মন্তব্য কী?
সাবের হোসেন চৌধুরী : এই বিলের একটি প্রেক্ষাপট হলো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা। আমার সামনে দুটো পথ ছিল। প্রথমত, বিরোধী দলে থাকাকালীন আমি পুলিশি হেফাজতে যে নির্যাতনের শিকার হয়েছি, সুযোগ পেলে কাউকে তার চেয়ে তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি করা। দ্বিতীয়টি হলো পুরো পদ্ধতিতে এমন পরিবর্তন আনা, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এ ধরনের অভিজ্ঞতার শিকার না হন।
আমি দ্বিতীয় পথটি বেছে নিই। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি বাংলাদেশ সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে আছে। সেখানে নাগরিকদের প্রতি রাষ্ট্র কী ধরনের আচরণ করবে, কীভাবে তাদের মর্যাদা সুরক্ষিত হবে, তাও লেখা আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সরকার জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কনভেনশনে সই করে, যার ১৪ নম্বর ধারার ভিত্তিতে দেশের আইন তৈরির কথা বলা হয়েছে। বিলটি নিয়ে সংসদীয় কমিটিতে ব্যাপক আলোচনা হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল, আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, কয়েকজন বিশিষ্ট আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা উপস্থিত হয়ে কমিটিকে পরামর্শ দেন। তাই আলোচনা ছাড়া বিলটি পাস হওয়ার অভিযোগ ঠিক নয়।
প্রথম আলো : পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে ফৌজদারি কার্যবিধির অনেক কিছুর সঙ্গে ওই আইনটি সংগতিপূর্ণ নয়?
সাবের হোসেন চৌধুরী : প্রথমত, কোনো আইন ফৌজদারি কার্যবিধির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কি না, সেটি দেখার দায়িত্ব আইন মন্ত্রণালয়ের এবং কমিটি পর্যায়ে আইন মন্ত্রণালয় সেই প্রশ্ন তুলতে পারত। দ্বিতীয়ত, পুলিশের প্রস্তাবে দায় থেকে র্যাব, গোয়েন্দা বিভাগ, বিশেষ তদন্ত
দল, বিশেষ শাখা ইত্যাদিকে বাদ দিতে বলা হয়েছে। এটি গ্রহণযোগ্য নয়। আইনের মূল লক্ষ্য সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার
সুরক্ষা। আপনি এমন সংশোধনী আনতে পারেন না, যা সংবিধানের মূল চেতনার পরিপন্থী।
প্রথম আলো : জাতীয় সংসদে গৃহীত কোনো আইনকে নির্বাহী বিভাগ কিংবা এর কোনো শাখা এভাবে চ্যালেঞ্জ করতে পারে কি?
সাবের হোসেন চৌধুরী : আইনের যেকোনো বিধান নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে তার একটি প্রক্রিয়া থাকতে হবে। তারা সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আলোচনা করতে পারত। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, কোনো মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে, মামলাটি সত্য হলে যে শাস্তি বিবাদী পেত, তার অর্ধেক শাস্তি বাদীকে ভোগ করতে হবে। এই প্রস্তাব বিচার পাওয়ার অধিকারের পরিপন্থী। মামলার গুণাগুণ বিচার করবেন আদালত। এমন কিছু হওয়া উচিত নয়, যা সংসদের জন্য অবমাননাকর।
প্রথম আলো : গত সংসদে আপনি সাংসদদের আচরণ সম্পর্কিত আরেকটি বিল এনেছিলেন। সেটি পাস হয়নি কি সাংসদদের অসহযোগিতার কারণে?
সাবের হোসেন চৌধুরী : অনেকেই নীতিগতভাবে একমত ছিলেন। সাংসদদের অন্যতম দায়িত্ব সরকার ও নির্বাহী বিভাগের কাজ তদারকি করা। তবে নিজেদের কাজের তদারক করার ব্যবস্থা নেই। এই বিলের মূল চেতনা ছিল সেলফ ইভালিউশন (Self-evaluation) ও সেলফ সেন্সরশিপ (Self-censorship)। নিজেদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সাংসদদের সচেতন করা।
আরেকটি বিষয় হলো স্বার্থের দ্বন্দ্ব। একজন সাংসদের অন্য পেশা ও পরিচয় থাকতেই পারে। কিন্তু সাংসদ হিসেবে যাতে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তার সঙ্গে সংঘাত না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে হাউস অব কমন্সে একটি স্বচ্ছ পদ্ধতি আছে। সেখানে একটি রেজিস্টার বই থাকে, যাতে লেখা থাকে কোন কোন বিষয়ে সাংসদদের স্বার্থ জড়িত। এই স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারণে রাষ্ট্র, সরকার বা মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে না।
আবার কয়েকজন সাংসদ মনে করেছেন, তাঁদের জন্য কেন জবাবদিহির ব্যবস্থা থাকবে? এই বিল তাঁদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করবে। তবে আমার ধারণা, এ ধরনের কোড অব কন্ডাক্ট থাকলে জনগণের মাঝে সাংসদদের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হতো। আমরা যে ব্রিটিশ সংসদীয় পদ্ধতি অনুসরণ করছি, সেখানেও সাংসদদের আচরণবিধি আছে। এটাও একধরনের জবাবদিহি।
প্রথম আলো : সংসদীয় কার্যবিধি অনুযায়ী কোনো সাংসদ সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবেন না। কিন্তু গত সংসদে বেশ কয়েকজন সরকারদলীয় সদস্য সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করেছেন।
সাবের হোসেন চৌধুরী : বর্তমান ব্যবস্থায় কেউ কার্যপ্রণালি বিধি ভঙ্গ করলে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় এবং স্পিকার রুলিং দিলে সেটি কার্যকর হয়। কিন্তু সাংসদদের আচরণবিধি আইন থাকলে সেটি নৈতিকতা কমিটির কাছে চলে যেত। আমার বিলের উদ্দেশ্যই ছিল সাংসদদের আচরণের জন্য এমন একটি মানদণ্ড তৈরি করা।
প্রথম আলো : আপনি সাংসদদের আচরণবিধি সম্পর্কিত যে বিল এনেছিলেন তার লক্ষ্য ছিল সংসদীয় ব্যবস্থাকে উন্নত করা। কিন্তু গত বছরের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে যে সংসদ গঠিত হয়েছে, সেখানে সেটি সম্ভব কি?
সাবের হোসেন চৌধুরী : যাঁরা সত্যিকার অর্থে জনগণের জন্য কাজ করেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই চাইবেন তাঁদের কাজের মূল্যায়ন একটি নির্বাচনের মাধ্যমে হোক। আর সেটি সম্ভব প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই। তবে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রেক্ষাপটটিও আমাদের মনে রাখতে হবে। ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে বাংলাদেশের একটি বড় রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকে, যদিও তাদের নির্বাচনে আনার জন্য সব ধরনের প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছিল। কোনো দল যদি নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া থেমে থাকতে পারে না। দ্বিতীয়ত, গণতন্ত্র বলতে আমরা শুধু নির্বাচনকেই বোঝাই। দুটো নির্বাচনের যে মধ্যবর্তী সময়, সেখানেই গণতন্ত্রের মূল পরীক্ষা এবং নির্বাচনের পাশাপাশি এটাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কোনো দল নির্বাচনে গেল না, আবার কোনো দল নির্বাচনের পর সংসদে গরহাজির থাকল—দুইয়ের ফলাফল তো একই।
প্রথম আলো : কিন্তু গণতন্ত্রের জন্য একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তো হতে হবে?
সাবের হোসেন চৌধুরী : হ্যাঁ, হতে হবে। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে নির্বাচন হলো, সেটি যদি পূরণ না হয়, তাহলে গণতন্ত্র পূর্ণতা লাভ করে না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দল সংসদকে কার্যকর রাখার কথা বলেছে। একটি দলের ইশতেহারে ৩০ দিন অনুপস্থিত থাকলে সদস্যপদ বাতিল করার কথাও ছিল। কিন্তু নির্বাচনের পর তারা সেই অঙ্গীকার ভুলে গেল। তাই গণতন্ত্রকে টেকসই করতে হলে সার্বিকভাবে ভাবতে হবে। সাংবিধানিক ও অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই শক্তিশালী করতে হবে।
প্রথম আলো : আপনি আন্তপার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি হয়েছেন, এটি বাংলাদেশের জন্য গর্বের। কিন্তু যে সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে আপনি বিশ্ব সংস্থার সভাপতি হলেন, সেটি তো প্রশ্নবিদ্ধ।
সাবের হোসেন চৌধুরী : আইপিইউর সভাপতি নির্বাচনের আগে কিছু সদস্যের মধ্যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি, নির্বাচনে একটি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকাকে কেউ কেউ দুর্বলতা হিসেবে দেখতে পারেন, কিন্তু এই সংসদের বৈধতা নিয়ে আইনগত প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। আর গত নির্বাচনে কোনো দলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল না যে তারা অংশ নিতে পারবে না। যারা নির্বাচন বর্জন করেছে, তারা তাদের নিজ সিদ্ধান্তেই করেছে। কোনো দল নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে, এমনকি জনগণকে তা শান্তিপূর্ণভাবে বর্জনের আহ্বানও জানাতে পারে। কিন্তু সহিংসতার মাধ্যমে যদি কেউ নির্বাচন বানচাল করতে চায়, সেটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ নয়। আমরা এই বিষয়গুলো তুলে ধরেছি।
প্রথম আলো : গণতন্ত্র বিকাশে আইপিইউর ভূমিকা কী?
সাবের হোসেন চৌধুরী : আইপিইউ হচ্ছে সদস্যরাষ্ট্রের জাতীয় সংসদগুলো নিয়ে গঠিত বিশ্বের একমাত্র সংস্থা, যার যাত্রা শুরু হয় ১৮৮৯ সালে, জাতিসংঘ ও লিগ অব নেশনস প্রতিষ্ঠার অনেক আগে। ১৬৬টি দেশের জাতীয় সংসদের সদস্য, যার মধ্যে ৪৭ হাজার জন সাংসদ রয়েছেন এবং যাঁরা বিশ্বের ৬৫০ কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। ১২৫ বছর ধরে শক্তিশালী ও কার্যকর সংসদের মাধ্যমে গণতন্ত্রের টেকসই ভিত রচনার লক্ষ্যে আইপিইউ কাজ করে যাচ্ছে। কোনো সদস্যদেশে গণতান্ত্রিক ধারা যদি ব্যাহত হয়, তাহলে সেই সংসদের সদস্যপদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। যেমনটি হয়েছিল তিনবার (দুই দফা সামরিক শাসন এবং ২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে) বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও।
আইপিইউর বর্তমানে চারটি স্থায়ী কমিটি আছে—১. আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা ২. গণতন্ত্র ও মানবাধিকার ৩. টেকসই উন্নয়ন, অর্থ ও বাণিজ্য এবং ৪. জাতিসংঘ বিষয়সংক্রান্ত। ২০১৫ সালটি আইপিইউর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ বছরে তিনটি বড় সম্মেলন হওয়ার কথা। চলতি মাসেই দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস-সংক্রান্ত সম্মেলনটি হলো জাপানের সেন্দাইতে। অন্য দুটি হচ্ছে যথাক্রমে টেকসই উন্নয়ন নিয়ে সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে এবং জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে ডিসেম্বরে প্যারিসে। এসব সম্মেলনে যে চুক্তিগুলো হবে সদস্যদেশগুলোর পার্লামেন্ট তা অনুমোদন করবে এবং বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে ও তদারকি করবে। জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল) বা এসডিজি কর্মসূচিতে আনুমানিক ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রতিবছর ব্যয় হবে। এই ব্যয়ের তদারকির ক্ষেত্রে আইপিইউর ১৬৬টি সদস্যদেশের সাংসদেরা কার্যকর ভূমিকা রাখার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
প্রথম আলো : আন্তর্জাতিক পরিসরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় আইপিইউ কীভাবে কাজ করে?
সাবের হোসেন চৌধুরী : আইপিইউর একটি বিশেষ কমিটি মধ্যপ্রাচ্যে সংলাপের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে। যেমন ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে সরকারি পর্যায়ে কোনো যোগাযোগ নেই। তবে আইপিইউ সদস্য হিসেবে ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের পার্লামেন্টের মধ্যে আলোচনা হচ্ছে। তাদের সদস্যরা একসঙ্গে বসছেনও। আইপিইউ সিরীয় সরকার ও বিরোধী পক্ষের সঙ্গেও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারের নতুন পার্লামেন্ট হয়েছে। তারা তাদের সংসদ পরিচালনা, কমিটি ইত্যাদির ব্যাপারে আমাদের সহায়তা চেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যকার আলোচনার ক্ষেত্রে আমরা মধ্যস্থতা করেছি।
প্রতিবছর আইপিইউ ও জাতিসংঘের যৌথ উদ্যোগে সংসদীয় শুনানি হয়ে থাকে। জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রধানেরা সেই শুনানিতে থাকেন। এ বছরের আগস্ট মাসে আইপিইউ ও জাতিসংঘের যৌথ উদ্যোগে স্পিকারদের চতুর্থ বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এটির মূল বিষয় হচ্ছে শান্তি ও টেকসই উন্নয়ন।
প্রথম আলো : আইপিইউর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সাবের হোসেন চৌধুরী : সহিংসতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয় না। আইপিইউ সব সময় সহিংসতার নিন্দা করে আসছে এবং সংলাপ ও গণতন্ত্রচর্চার ওপর জোর দিয়ে থাকে। কোনো দেশে যদি অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া দ্বারা গণতন্ত্র বাধাগ্রস্ত হয়, সেখানে আমরা আরও গণতন্ত্রের মাধ্যমে তা মোকাবিলার কথা বলি।
প্রথম আলো : কিন্তু সংলাপহীনতাই কি এখানে মূল সমস্যা নয়?
সাবের হোসেন চৌধুরী : সংলাপের বিষয়টি দেখতে হবে সার্বিকভাবে। কার সঙ্গে সংলাপ করবেন, কীভাবে করবেন। আর সংলাপ তো কেবল দুটি দলের বিষয় নয়, অনেকের সঙ্গে অনেকেরই হতে পারে। অতীতের বিষয়গুলো যদি অনেক বেশি সাংঘর্ষিক মনে হয় এবং বর্তমান বিষয়ও যদি স্বস্তিদায়ক না হয়, তাহলে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ ও তার সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা ও সংলাপ হতেই পারে। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, বিভিন্ন সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ ভারতের থেকে এগিয়ে আছে। কিন্তু আমরা আরও বেশি এগোতে পারতাম। সেটি কী করে সম্ভব, তা নিয়েও আলোচনা হতে পারে। সংলাপ মানে শুধু কবে নির্বাচন হবে, নির্বাচনকালীন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটি নয়। কখন নয়, কীভাবে নির্বাচন হবে তা নিয়ে যথাসময়ে আলোচনা হতে পারে।
প্রথম আলো : ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে বাধা কী?
সাবের হোসেন চৌধুরী : সবাই যদি ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে দেশ ও মানুষের স্বার্থকে প্রাধান্য দেয়, কোনো বাধা দেখছি না। গণতন্ত্র হচ্ছে মানুষের কল্যাণে বিভিন্ন মত ও চিন্তার চর্চা। সুতরাং আমাদের মাঝে বিভিন্ন বিষয়ে ভিন্নমত থাকতেই পারে। তবে কেউ যদি সহিংসতার মাধ্যমে কিছু আদায় করতে চান, তার অর্থ হবে, ভবিষ্যতেও এই সহিংসতা জিইয়ে রাখা। আপনি যদি ধরেই নেন যে সহিংসতার মাধ্যমে সংকট সমাধান হবে, তাহলে ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে।
প্রথম আলো : তাহলে সমাধান কী? সরকারেরই কি উচিত নয় উদ্যোগী ভূমিকা নেওয়া?
সাবের হোসেন চৌধুরী : সাধারণত, সরকারকেই এগিয়ে আসতে হয় এবং উদ্যোগ নিতে হয়। তবে এখন যাঁরা আন্দোলন করছেন, তাঁরা তো সরকারকেই মানেন না। তাঁরা একদিকে বলছেন অবৈধ সরকার, অন্যদিকে সংলাপ চাইছেন, এটি কতটা যুক্তিসংগত? একদিকে সহিংস তৎপরতা চলবে, ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চলবে, আরেক দিকে আলোচনা চাইবেন, তা কি হয়? সবকিছুর আগে সহিংসতা বন্ধ হতে হবে। ক্ষতি রোধ করতে হবে। পারস্পরিক আস্থা স্থাপনের মাধ্যমে সংলাপের পরিবেশ ও প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সচল ও কার্যকর রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চালু করতে হবে। সহিংসতা যখন বন্ধ হবে তখন বল স্বাভাবিকভাবে সরকারের কোর্টে ফিরে যাবে।
প্রথম আলো : আপনাকে ধন্যবাদ।
সাবের হোসেন চৌধুরী : ধন্যবাদ।