সহিংস রাজনীতির অবসান হোক

শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের জন্য এটা স্বস্তির খবর যে গতকাল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বিঘ্নে আদালতে উপস্থিত হয়েছেন এবং জামিন পেয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি আদালতে হাজিরা দিয়েছিলেন। তখন তাঁর উপস্থিতিকে কেন্দ্র করে বকশীবাজার এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এর পর থেকে নিরাপত্তার অভাবের কারণে খালেদা জিয়া আর আদালতে হাজিরা দিতে যাচ্ছিলেন না। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি আদালত তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেও তিনি অনড় ছিলেন। তাঁকে জোর করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা না করে সরকারও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছে।
খালেদা জিয়া আদালত থেকে গুলশানে তাঁর কার্যালয়ে না গিয়ে বরং তাঁর বাসভবনে ফিরে গিয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ সংকেত দিলেন, সরকার তার তাৎপর্য বুঝতে ব্যর্থ হবে না বলেই মানুষ আশা করে। তিন মাস ধরে তিনি তাঁর কার্যালয়ে অবস্থান করছিলেন। একই সঙ্গে বিএনপি অবরোধ-হরতালের মতো সহিংস কর্মসূচি পালন করছিল, যাতে শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ও দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অনেক ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী গ্রেপ্তার-মামলা ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। ঘটেছে ‘নিখোঁজ’ ও ‘ক্রসফায়ারের’ ঘটনাও। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছিল তালাবদ্ধ।
এখন তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ, খালেদা জিয়ার জামিনলাভ ও দলীয় অফিস খুলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ সুস্পষ্ট। সরকার ও বিএনপি পরস্পরের প্রতি আরও নমনীয় মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে, এটাই প্রত্যাশিত। কারণ, সহিংস আন্দোলনের পথে বিএনপি যেমন বেশি কিছু অর্জন করতে পারেনি, তেমনি সরকারেরও বলপ্রয়োগ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
এ অস্থায় সরকার যদি বিএনপির মূল নেতাদের ওপর থেকে মামলা প্রত্যাহার, তাঁদের মুক্তি দেয় এবং নতুন করে কোনো ধরপাকড় না করে, তাহলে তা দূরদর্শিতার পরিচয় হিসেবে গণ্য হবে। বিপরীতে বিএনপিকেও অবরোধ-হরতাল প্রত্যাহার করে সুস্থ, শান্তিপূর্ণ রাজনীতির অধ্যায়ে ফিরে আসতে হবে। দেশবাসী এটা একান্তভাবে কামনা করে।