বরফ গলার জোরালো ইঙ্গিত

সোভিয়েত বনাম মার্কিন শীতলযুদ্ধের শেষ বরফখণ্ডটিও গলতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল কাস্ত্রোর করমর্দনে সেই উষ্ণতারই ইঙ্গিত। পানামায় আমেরিকা মহাদেশের রাষ্ট্রনেতাদের সম্মেলনে ওবামা-রাউল বৈঠক তাই গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক মাইলফলক। আমরা একে স্বাগত জানাই।
স্বৈরাচারী সরকারকে উচ্ছেদের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের দুই বছর পর ১৯৬০ সাল থেকেই কিউবা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের নিচে, সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তালিকায়। যুক্তরাষ্ট্রের নাকের ডগায় কিউবার উপস্থিতি ছিল এক বৈশ্বিক প্রেরণা। ষাটের দশকে যুক্তরাষ্ট্র কেবল কিউবায় সামরিক হামলা চালিয়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপক্রমই করেনি, কিউবান বিপ্লবের নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যার অনেক চেষ্টাও করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধে কিউবার অর্থনীতিও ভুগেছে অনেক। অতি সম্প্রতি কিউবায় অভ্যন্তরীণ সংস্কার শুরু হলে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু হয়।
মার্কিন প্রশাসনের ভেতর ও বাইরে থেকে অনেকেই কিউবার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের বিপক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী কিউবানরাও এ বিষয়ে সোচ্চার ছিল। পাশাপাশি পোপের কিউবা সফর এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার দূতিয়ালিও ক্রিয়াশীল ছিল। উভয় রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ১৮ মাস যাবৎ গোপনে আলোচনাও করে যাচ্ছিলেন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রও বিশ্বে তার একমেবাদ্বিতীয়ম অবস্থান আর চালিয়ে যেতে সক্ষম নয়। কিউবার পক্ষেও বিশ্ববাজারের বাইরে থাকা মঙ্গলজনক নয়।
যুদ্ধে যুদ্ধে বিপর্যস্ত পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যে শান্তির সূচনা অস্ত্রের ওপর কূটনীতির বিজয় ঘোষণা করে। ইরানের সঙ্গে পরমাণু শান্তি চুক্তিও দেখায় যে সমঝোতায় দুই পক্ষই জিততে পারে। শান্তিকে সুযোগ দেওয়ার জন্য বারাক ওবামার প্রশাসনকেও ধন্যবাদ জানাতে হয়। তিনি খোলাখুলি স্বীকার করেন যে বৈরিতার নীতি কোনো কাজে আসেনি। কিউবা যেমন লাতিন আমেরিকার পথপ্রদর্শক, তেমনি অভ্যন্তরীণ উদারীকরণেও তাদের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। এ ঘটনা এটাই প্রমাণ করে, বিচক্ষণ ও জনসম্পৃক্ত সরকারের পক্ষে দেশকে স্বাধীন ও আত্মমর্যাদাবান রাখা সম্ভব।