টিআইবির নির্বাচনী গবেষণা

যুক্তি দিয়ে যুক্তি খণ্ডন করাই গ্রহণযোগ্য, এটাই গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের পূর্বশর্ত। কিন্তু বাংলাদেশে যুক্তিনির্ভর তর্কবিতর্কের পরিবেশ যেন ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়ছে। প্রশংসা না করতে পারলে সমালোচনা করা সাজে না, এটা নিশ্চয় যুক্তির কথা নয়। প্রশ্নবিদ্ধ সিটি নির্বাচন সম্পর্কে টিআইবির ১৮ মের গবেষণা প্রতিবেদনকে একটি ভিন্নমত বা সমালোচনা হিসেবে দেখাই উচিত। সবচেয়ে অস্বস্তিকর ও উদ্বেগজনক হলো, সমালোচককে বন্ধু ভাবছে না কেউ। সরকার ও সাংবিধানিক সংস্থার মধ্যেও কোনো ফারাক লক্ষ করা যাচ্ছে না। অথচ ইসির উচিত টিআইবির তোলা নির্দিষ্ট অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা এবং তার ফলাফল জনগণের সামনে প্রকাশ করা। এককথায় নাকচের দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করা উচিত। মেয়র প্রার্থীরা সাত কোটি টাকা খরচ করেছেন বলে টিআইবির গবেষণায় যে তথ্য বেরিয়ে এসেছে, আনুষ্ঠানিক তদন্তের আগে এটা ইসি নাকচ করে কীভাবে?
সমর্থন পেতে চট্টগ্রামের প্রার্থীরা টাকা দিয়েছেনবিভিন্ন দাবি আদায়ে রাজপথের আন্দোলনে বরাবর সামনের সারিতে থাকা আওয়ামী লীগের উচিত নয় তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বা সমালোচকদের প্রতি অব্যাহতভাবে অসহিষ্ণু মনোভাব দেখানো। জনগণের চোখে আওয়ামী লীগের এ রকম একটি ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে দিলে তা গণতন্ত্রকেই আঘাত করে। সমাজে বিশিষ্ট লোক ও সংগঠনের ঘাটতি পড়েনি, যারা উঁচু গলায় সব সময় সরকারকে সহস্র কণ্ঠে প্রশংসা করছে। কিন্তু এটা কেমন কথা যে কেউ তাদের কাজের সমালোচনা করতে পারবে না। দেড় দশকের বেশি সময় ধরে টিআইবি ক্ষমতাসীন দলের চক্ষুশূল হয়ে আছে। কেউ সমালোচনা করলেই তাকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা সমীচীন নয়।
একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ন্যূনতম বৈশিষ্ট্য হলো সরকার ও রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর তরফে ভিন্নমত, সমালোচনাকে সাধারণভাবে স্বাগত জানানো। কিন্তু নিয়ত আমরা বিপরীত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছি। একটি গণতান্ত্রিক সরকারের নিজের স্বার্থেই উচিত কতিপয় প্রতিষ্ঠানকে সরকারি কাজের তদারকিকে অনবরত উৎসাহিত করা। সরকার বাক্স্বাধীনতার প্রতি অসহিষ্ণু—জনমনে এমন ধারণার ছাপ পড়তে দেওয়া সমীচীন নয়।