ধাত্রীবিদ্যা ও চিকিৎসক

প্রথম আলোর গত ১১ মে ‘নারী ও শিশু স্বাস্থ্য’ শিরোনামে অধ্যাপক সামিনা চৌধুরীর ‘বাংলাদেশে মিডওয়াইফ এখন স্বপ্ন নয়’ নিবন্ধটি পড়ে ভালো লাগল। চিকিৎসক হিসেবে বিস্ময়ের সঙ্গে দেখি যে কীভাবে শহরে, রাজধানীর হাসপাতাল এবং ক্লিনিকগুলোতে ‘সিজারিয়ান ডেলিভারি’ করার সংখ্যা অবিশ্বাস্য রকম বেড়ে চলেছে। অথচ এই দেশে গ্রামগঞ্জে এখনো প্রায় ৮০% শতাংশ প্রসব হয় অদক্ষ বা স্বশিক্ষিত নারীর হাতে। এ অবস্থাতেও আমরা মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি।
এমবিবিএস চিকিৎসক ‘স্ত্রী বা ধাত্রীবিদ্যা’ বিষয়ে কাজ করতে আসেন ‘নরমাল ডেলিভারি’ না দেখেই। গর্বের সঙ্গে এ-ও বলেন যে তিনি যথেষ্ট ‘সিজারিয়ান’ ডেলিভারি দেখেছেন এবং সহায়তা করেছেন। তখনই প্রশ্ন আসে—তিনি তাহলে ‘অবসটেট্রিকস’ বা ‘ধাত্রীবিদ্যা’ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ১০টি ডেলিভারির তালিকা কীভাবে পূরণ করলেন? আশ্চর্যের বিষয় হলো এই—সিজারিয়ান যে একটি ‘মেজর সার্জারি’—এ বোধটুকুই সম্ভবত তাঁদের হয়নি।
এরপর আসে পোস্টগ্র্যাজুয়েটদের প্রসঙ্গ। শোনা যায়, ডিঅ্যান্ডসি-এমআর সিজারিয়ানে তাঁদের অনেকে ভীষণ চৌকস। কিন্তু ‘রিপেয়ার অব টিয়ার’, ‘ভ্যাকিউম’ বা ‘লো ফোরসেপস্’-এর মতো প্রসবের সঙ্গে জড়িত প্রয়োজনীয় পদ্ধতির সঙ্গে মনে হয় তাঁদের পরিচয়-ই হয়নি। পরের দুটি পদ্ধতির সময়োপযোগী দক্ষ ও নিপুণ প্রয়োগ বহু অবাঞ্ছিত সিজারিয়ান ও নবজাত ‘ক্রাইসিস’ এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব। কিছু পোস্টগ্র্যাজুয়েটকে ‘টিউবাল লাইগেশন’-এর মতো ছোট্ট অস্ত্রোপচারের দায়িত্ব দিতেও ভয় হয়। তত্ত্বগতভাবে তারা কিন্তু চোস্ত।
‘মিডওয়াইফারি’ প্রশিক্ষণের পাশাপাশি আমাদের পাস করা চিকিৎসক ও সার্টিফিকেট অর্জনকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরও যথাযথ প্রায়োগিক বা হাতে-কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাঁদের বিশেষজ্ঞ হিসেবে উপযুক্ততা অর্জন করতে দেওয়ার নৈতিক দায়িত্ব শিক্ষক ও প্রশিক্ষকদের। আমরা যেন সেই লক্ষ্যে এখনই সচেষ্ট হই।
সুরাইয়া রহমান
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.), ঢাকা।