গম সমাচার

চাঁদাবাজি, দখলবাজি, পাচারবাজি অহরহ চলছে। এখন এক অভিনব পদ্ধতিতে গমবাজির দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চলেছে সরকার। প্রয়োজন নেই, তা-ও বাড়তি দামে আরও এক লাখ টন গম সংগ্রহ করছে তারা। এর আগে দেড় লাখ টন গম সংগ্রহ হয়ে গেছে। কিন্তু দলের সাংসদ ও নেতা-কর্মীদের চাহিদার চাপে বাজারদরের চেয়ে কেজিপ্রতি প্রায় ১০ টাকা বেশি দরে অতিরিক্ত এই গম সংগ্রহ করতে সরকারের লোকসান হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। জনগণের টাকা দলীয় লোকজনের পকেটে চালান করার এটা এক অভাবনীয় কৌশল।
খোদ কৃষকের কাছ থেকে যে গম সংগ্রহের কথা, সেটা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে সাংসদ ও দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে। এখানে কোনো রাখঢাক নেই। একজন সাংসদ খোলামেলা বলেছেন, তাঁদের দল-পার্টিকে সহায়তা করতেই বেশি দামে এই গম সংগ্রহের ব্যবস্থা। আরেকজন সাংসদ সগর্বে ঘোষণা করেছেন যে তাঁর এলাকায় গম সরবরাহ নিয়ে যেন মারামারি-হানাহানি না হয়, সে জন্য তিনি নিজেই এক টন গম সরবরাহ করেছেন!
প্রয়োজন নেই তবু দলের স্বার্থে বাড়তি গম কেনাবাজারে দাম পড়ে গেলে খোদ কৃষকের কাছ থেকে সরকার বাজারদরের চেয়ে দু-চার টাকা বেশি দরে ধান-চাল-গম সংগ্রহ করে থাকে। এতে কৃষক লাভবান হন। কিন্তু এখন লাভ করছেন দলীয় লোকজন। ১৮ থেকে ২০ টাকা দরের গম তাঁরা সরকারের কাছে সরবরাহ করছেন ২৮ টাকা দরে। এ রকম গমবাজির জন্য সরকারি টাকার অপব্যবহার একধরনের প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি।
যেসব সাংসদ ও দলীয় নেতা বাড়তি গম কেনার চাহিদাপত্র পাঠিয়েছেন, তাঁদের বিস্তৃত তথ্য রোববার প্রথম আলোর শীর্ষ প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে। এখন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে পরীক্ষা করে দেখা দরকার ওই সব এলাকায় কার কাছ থেকে গম সংগ্রহ করা হয়েছে। খোদ কৃষক লাভবান হয়েছেন কি না। যদি অনিয়ম হয়ে থাকে, তাহলে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের মুখোমুখি করতে হবে। তিনি সরকারি দলের নেতা কি না, সেটা দেখার বিষয় নয়।