আমাদের সময়ের নায়ক
বর্তমান সময়ের অনেকে হয়তো তাঁকে রুপালি পর্দার ভিলেন হিসেবে চেনেন। কিন্তু খলিল ছিলেন আমাদের সময়ের নায়ক। সেটা ষাটের দশকের কথা। জহির রায়হানের সঙ্গম তুমুল সাড়া ফেলেছিল গোটা পাকিস্তানে। বড় পর্দায় রঙিন ছবি দেখার অভিজ্ঞতা আমাদের সেটাই প্রথম। আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি। মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছিলাম খলিলের অভিনয়।
এই ছবির দুই নায়কের একজন ছিলেন খলিল (অন্যজন অভিনেতা হারুন রশীদ)। ছবিতে খলিলের অভিনয় তুমুল দর্শকপ্রিয়তা পায়। এই ছবিটিই তাঁকে তুঙ্গস্পর্শী জনপ্রিয়তা এনে দেয়। মনে পড়ে, সে সময়ে খলিল এতটাই জনপ্রিয় ছিলেন যে একটি ওষুধ কোম্পানি তাঁকে মডেল হিসেবে ব্যবহার করেছিল।
ফকির মজনু শাহ তাঁর আরেকটি উল্লেখযোগ্য ছবি। ঐতিহাসিক একটি চরিত্রকে তিনি সফলভাবে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন। আলোর মিছিল ছবিতে তিনি নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। আমি বলব সেটিও তাঁর একটি অসাধারণ ছবি। গুন্ডা ছবিতে অভিনয় করে তিনি ১৯৭৬ সালের সেরা পার্শ্ব অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জেতেন।
নিজস্ব স্টাইলের উঁচু লয়ের অভিনয় দিয়েই তিনি দর্শকদের মন জয় করেছিলেন। সম্ভবত এটা ছিল মঞ্চ অভিনয়েরই প্রভাব। তিনি কাজ শুরু করেছিলেন মঞ্চনাটক দিয়ে।
পর্দায় অনেকে তাঁকে ভিলেন হিসেবে দেখলেও তিনি মানুষ হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। তিনি ছিলেন চলচ্চিত্র অন্তঃপ্রাণ একজন মানুষ। তাঁর সঙ্গে প্রথম কবে দেখা মনে নেই। তবে এটুকু মনে আছে তিনি আমাকে ‘ছোট ভাই’ হিসেবে বেশ পছন্দ করতেন। একটা সময়ে তিনি শিল্পী সমিতির সভাপতি ছিলেন। আমার বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাস বইটি প্রকাশের সময় তিনি যথেষ্ট সহায়তা করেছিলেন।
খুবই দুঃখজনক ব্যাপার, আমাদের অনেক গুণী শিল্পী-কলাকুশলী শেষ বয়সে অর্থসংকটে ভোগেন। তাঁকেও এই দুর্ভাগ্য মেনে নিতে হয়েছিল। তিনি অসুস্থ ছিলেন দীর্ঘদিন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর চিকিৎসার ভার নেন।
নায়ক বা ভিলেন নয়, সময়ের জনপ্রিয় একজন অভিনেতা হিসেবেই আমি তাঁকে দেখি। যিনি দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। এ ধরনের শিল্পীর সংখ্যা দিনে দিনে কমে আসছে।
লেখক: চলচ্চিত্র বিষয়ক লেখক ও গবেষক।