বস্তির মানোন্নয়ন

১৭ বছরের ব্যবধানে বস্তিতে ঝুপড়িবাসীর পরিবারের সংখ্যা ৭৫ শতাংশ কমে আসা নিশ্চয়ই দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির ইঙ্গিত দেয়, কিন্তু এই তথ্য মনে স্বস্তি জাগায় না। সংবিধানে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার তথা খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসা সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পরও দেশের এক-চতুর্থাংশ মানুষের দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করা উদ্বেগজনকও বটে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বস্তির সাড়ে ৬২ শতাংশ মানুষ কাঁচা বা টিনের ঘরে বাস করে। আধা পাকা ঘরে বাস করে তার অর্ধেকের কাছাকাছি। ১৯৯৭ সালে বস্তিতে ঝুপড়িবাসীর সংখ্যা যেখানে ১ লাখ ৪২ হাজার ছিল, সেখানে বর্তমানে মাত্র ৩৬ হাজার। এ ছাড়া বর্তমানে ছিন্নমূল বা ভাসমান মানুষের সংখ্যাও অর্ধেকে নেমে এসেছে বলে জরিপে জানানো হয়। এগুলো নিঃসন্দেহে অগ্রগতি।
১৭ বছরের ব্যবধানে বস্তিতে ঝুপড়িবাসীর সংখ্যা ৭৫% কমেছেকিন্তু এক-চতুর্থাংশের স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার (অর্থাৎ বাকিরা কাঁচা পায়খানা ব্যবহার করতে বাধ্য হয়), ৪৫ শতাংশ পরিবারের ট্যাপ বা সরবরাহ করা পানির ব্যবহার, কিংবা সবার জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারার অর্থ হলো সংবিধান বর্ণিত মৌলিক মানবাধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা। দ্বিতীয়ত, বাসস্থানের বাইরে যে মৌলিক অধিকার যেমন পুষ্টিকর খাদ্য, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ থেকেও তারা কমবেশি বঞ্চিত। তাই বস্তিবাসীদের মধ্যে ৮৪ শতাংশের মুঠোফোন থাকা, ৪৮ শতাংশের টেলিভিশন থাকা মানবাধিকারের মৌল শর্ত পূরণ করে না। এ ছাড়া পরিসংখ্যানে দেশে ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে মাত্র ২২ লাখ ৩২ হাজার ১১৪ জন বস্তিবাসী কিংবা ১৬ হাজার ভাসমান আছে বলে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তার যথার্থতা নিয়েও প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
আমরা আশা করব দেশের সব বস্তিতে বসবাসকারী নাগরিকদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা পূরণে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বস্তির মানোন্নয়ন কেবল ঘরের মানোন্নয়ন নয়, সেখানকার বাসিন্দাদের ন্যূনতম চাহিদাগুলোও মেটাতে হবে। কেননা, তাদের ঘাম ও শ্রমেই দেশ সচল আছে।