পুলিশের 'গাফিলতি'

সিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজন হত্যাকাণ্ডের পরপর দায়িত্ব পালনে ‘গাফিলতি’র অভিযোগে সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানার দুজন উপপরিদর্শককে (এসআই) সাময়িক বরখাস্ত ও একজন পরিদর্শককে প্রত্যাহার করার খবর কোনোভাবেই স্বস্তিদায়ক নয়। বরং এই লঘু ও লোক দেখানো পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের গড়িমসিই স্পষ্ট হলো। এত বড় ঘটনাতেও যদি তাঁরা এমন দায়সারা থাকেন, তাহলে আস্থা ফিরে আসার সুযোগ থাকে না।
প্রথমত বলা দরকার, পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো অন্যায়-অপরাধের অভিযোগ উঠলে খোদ পুলিশ বিভাগই তার তদন্ত করে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সততার সঙ্গে, নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করা হয় না, বরং অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে রক্ষা করার চেষ্টা চলে। রাজন হত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পরে জালালাবাদ থানার পুলিশ কী দায়িত্ব পালন করেছে—এটা তদন্ত করার লক্ষ্যে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে সেই একই প্রবণতা দেখাল। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এসআই আমিনুল ইসলাম ও এসআই জাকির হোসেন এবং পরিদর্শক (তদন্ত) আলমগীর হোসেনের ‘গাফিলতি’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
কিন্তু ‘গাফিলতি’ বলতে আসলে কী বোঝানো হয়েছে? কেন তাঁরা ‘গাফিলতি’ করেছেন? আসলে তদন্ত করা উচিত তাঁদের গাফিলতির পেছনের কারণ কী, গাফিলতি উদ্দেশ্যপূর্ণ ছিল কি না। কেননা, অভিযোগ উঠেছে যে তাঁরা অর্থের বিনিময়ে রাজন হত্যাকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত কামরুলকে সৌদি আরবে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন এবং হত্যাকাণ্ডের পরপর নিহত রাজনের বাবার অভিযোগগুলো আমলে না নিয়ে আসামিপক্ষের বক্তব্যকেই গুরুত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ পুলিশের ওই সদস্যরা ন্যায়বিচারপ্রার্থীর পক্ষে না দাঁড়িয়ে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পক্ষ নিয়েছেন ব্যক্তিগত ও অনৈতিক স্বার্থতাড়িত হয়ে—এটা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ। এ ধরনের গুরুতর অিভযোগের যে তদন্ত তাঁরা নিজেরা করেছেন, তা প্রশ্নবিদ্ধ হতে বাধ্য। নৈতিক স্খলনের গুরুতর অভিযোগে ফৌজদারি মামলা দায়ের না করে শুধু সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
এ ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া জরুরি।