এল কে সিদ্দিকী

এল কে সিদ্দিকী
এল কে সিদ্দিকী

আবুল হাসনাত লুৎফুল কবির সিদ্দিকী ছিলেন সম্ভ্রান্ত বংশের সন্তান। তিনি ছিলেন কর্মবীর। আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং (সিভিল) ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৬১ সালে। তিনি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের একজন আজীবন ফেলো। ব্যবহারিক জীবনে ছিলেন একজন পরামর্শক প্রকৌশলী। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান পুরালয় প্রকৌশলী লিমিটেডের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
রাজনীতির প্রতি তাঁর ছিল গভীর অনুরাগ। বলতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা নেই, এ ক্ষেত্রে তাঁর সাফল্য ঈর্ষণীয়। ১৯৭৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ সরকারের বিদ্যুৎ, পানিসম্পদ ও বন্যানিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নিযুক্ত হন। ১৯৮১-৮২ সময়কালে তিনি সেচ, পানি উন্নয়ন ও বন্যানিয়ন্ত্রণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদের আবারও সদস্য নির্বাচিত হন। এই সংসদে তিনি পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনেও তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন এবং ১০ অক্টোবর ২০০১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত পানিসম্পদমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রাজনৈতিক ক্রিয়াকলাপে তাঁর মেধা ও দক্ষতা সীমিত থাকেনি। সমাজজীবনের চারদিকে তা বিস্তৃত হয় এবং যে কাজে তিনি হাত দিয়েছেন, সেটাই সফলতা লাভ করেছে।
বাংলাদেশের ইতিহাসে শতনাগরিক এক ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছে। এই শতনাগরিকের সংগঠনে এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে এর প্রয়োগে তাঁর ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য।
তিনি ছিলেন বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। ১৯৭৯ সালে তিনি জাতিসংঘের ৩৪তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন। তিনি চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ রেসিডেন্সিয়াল এরিয়া সোশিও কালচারাল অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, আগ্রাবাদ বালিকা বিদ্যালয়, আগ্রাবাদ মহিলা কলেজ, বিজয় সরণি কলেজ এবং সীতাকুণ্ড বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজের প্রতিষ্ঠাতা। তা ছাড়া তিনি ছিলেন চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালের সাবেক সভাপতি।
বিভিন্ন সম্মানসূচক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হিসেবে তিনি প্রদর্শন করেছেন অপূর্ব দক্ষতা। অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান (১৯৯২-৯৪), রোটারি ডিস্ট্রিক্টের (৩২৮০) গভর্নর, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্য। অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের (এই) সাবেক সভাপতি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
অনেক সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গভীরভাবে তিনি সংশ্লিষ্ট ছিলেন। বাংলা একাডেমির আজীবন সদস্য, ঢাকার পল্লী শিশু ফাউন্ডেশনের সহযোগী সদস্য। চট্টগ্রামের Wild Life Preservation and Nature Conservation সমিতির পৃষ্ঠপোষক, চট্টগ্রামের আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ঢাকার সীতাকুণ্ড সমিতির প্রধান উপদেষ্টা। চট্টগ্রামের Alliance Francaise-এর নির্বাহী কমিটির সদস্য। ঢাকায় চট্টগ্রাম সমিতির সদস্য। কক্সবাজার শিশু হাসপাতালের সদস্য এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য।
এল কে সিদ্দিকীর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো তিনি ছিলেন একজন ভালো মানুষ। এই সমাজে ভালো মানুষের দুর্ভিক্ষ চলছে। এই দুর্ভিক্ষের মরুভূমিতে তিনি ছিলেন মহামূল্যবান, শ্যামলিমায় ঘেরা। চারদিকে সবুজের মণি-মুক্তাপূর্ণ শান্তিদায়ক মরূদ্যান। ছায়া দানকারী, প্রয়োজনে প্রাণের উপাদানগুলোকে সজীবকারী, সদাহাস্য, মহান এক নাগরিক। আমার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল প্রগাঢ়। তাঁর সঙ্গে মন খুলে কথা বলতাম।
ব্রিটেনের অমর কবি উইলিয়াম শেক্সপিয়ার তাঁর কিং লেয়ার নাটকের চতুর্থ অঙ্কে লিখেছেন, ‘Have more than thou showest, speak less than thou knowest.’ [যা বপন করেছ, তার চেয়ে বেশি পাওয়া উত্তম, যতটুকু জানো তার চেয়ে কম বলতে হবে।] উত্তম আচরণ এবং কার্যক্রমের এটাই নিয়ম। বন্ধুবর এল কে সিদ্দিকীর ক্ষেত্রে এটিই প্রতিফলিত হয়েছে।
অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর এবং বর্তমানে UODA-এর ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োজিত আছেন।