এবার অপহরণের শীর্ষ দশে!

অপহরণের ব্যাপকতার মানদণ্ডে বাংলাদেশ বিশ্বের শীর্ষ ১০টি দেশের অন্যতম। দুর্নীতির মতো, পুলিশে অনাস্থার মতো, নারী নির্যাতনের ব্যাপকতার মতো, মানব পাচারের মতো; এটিও বাংলাদেশের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার নতুন রেকর্ড। একের পর এক বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সূচকে বাংলাদেশের অবনতির চিত্র উঠে আসছে; সরকার দেখেও দেখছে না! এসবই যে সার্বিক অধঃপতনের বহিঃপ্রকাশ; সেই উপলব্ধি সরকারের নীতিনির্ধারকদের মনে আসা দরকার।
অব্যাহত অপহরণের ঘটনা ও ঝুঁকির মাত্রা হিসাব করে কন্ট্রোল রিস্ক নামের একটি ব্রিটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এই তালিকা তৈরি করেছে। এই তালিকায় মেক্সিকোর পরে ভারত, পাকিস্তান ও ইরাকের পদাঙ্ক অনুসরণ করে সপ্তম স্থান অধিকার করে আছে বাংলাদেশ। এবং খেয়াল করার বিষয়, প্রথম হওয়া মেক্সিকো, দ্বিতীয় ভারত, তৃতীয় পাকিস্তান ও চতুর্থ হয়েছে ইরাক। খেয়াল করার বিষয়, এসব দেশে বিভিন্ন আকারে ‘যুদ্ধ’ চলছে। অপহরণ, মুক্তিপণ সেখানকার ‘যুধ্যমান’ শক্তিগুলোর নিয়মিত অস্ত্র। কিন্তু বাংলাদেশে তো সে রকম অবস্থা বিরাজ করছে না। তাহলে এর উৎস ও হেতু কী?
অপহরণে শীর্ষ ১০ দেশের তালিকায় বাংলাদেশপুলিশের দক্ষতা, প্রযুক্তিগত সামর্থ্য, লোকবল সবই বেড়েছে, পাশাপাশি বেড়েছে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা। এসবই মানবিক বিপর্যয়ের সুযোগ করে দেয়। গত বছর নারায়ণগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সাতজন অপহৃত হলে, পরিস্থিতির ভয়াবহতা জনগণের গোচরে আসে। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও উদ্বেগ জন্মায়। এরই প্রতিফলন ঘটেছে কন্ট্রোল রিস্কের এই প্রতিবেদনে।
রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, পুলিশ ও র্যা বের জবাবদিহি না থাকা; সর্বোপরি আইনের শাসন ও জবাবদিহির সংস্কৃতি যতই দুর্বল হবে, ততই দেশে এ ধরনের অপরাধপ্রবণতা বাড়বে। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দুর্বল করা বা অন্য কোনো কারণে প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শিশু–কিশোর ও নারী অপহরণের ঘটনাও ঘটে। অপহৃত অনেকেই আর কখনো ফিরেও আসে না! রাজনীতি ও রাষ্ট্রের দুর্বৃত্তায়ন জন্ম দিয়েছে অপহরণের ব্যাপকতার। পরিস্থিতি আশির দশকের লাতিন আমেরিকার মতো চরম নৈরাজ্যকর দশায় নিপতিত হওয়ার আগেই সরকারকে অবশ্যই পরিস্থিতির রাশ টেনে ধরতে হবে।