বিরোধ রাজনীতিতে

আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—রাজনীতিতে মিলমিশের লেশমাত্র নেই। কিন্তু বিষয়টি যখন লুটপাট, তখন চিত্র পুরো আলাদা। মিলেমিশেই এ কাজ করতে অভ্যস্ত দুই পক্ষ। টাঙ্গাইলের সখীপুরে বনের গাছ লুটপাটে মাঠে আছে দুই পক্ষই। রাজনৈতিক পরিচয়ই গাছ লুটকারীদের রক্ষাকবচ।
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। আর এই উপজেলায় এখন করাতকলের সংখ্যা ১০৬। আইন অনুযায়ী সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকার ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো করাতকল হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সখীপুরে সংরক্ষিত বনের পাশেই রয়েছে ৫৬টি করাতকল। এতগুলো অবৈধ করাতকল কীভাবে চলছে? আসলে কারা এগুলো চালাচ্ছে, তাতেই এই প্রশ্নের জবাব রয়েছে। প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, এই অবৈধ করাতকলগুলোর ৩২টি আওয়ামী লীগ, ১৮টি বিএনপি আর ছয়টি চালাচ্ছেন কৃষক শ্রমিক লীগের নেতারা। মিলেমিশে চুরি আর কাকে বলে! এমনকি আঞ্চলিকভাবে অবস্থান থাকায় কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মতো ছোট দলের নেতারাও যুক্ত হয়েছেন এই অপকর্মে।
এই করাতকলগুলোতে মধুপুর-ভাওয়াল সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে চোরাইভাবে কেটে আনা গাছ কেটে কাঠে পরিণত করা হচ্ছে। এই করাতকলগুলোর কারণে ধ্বংস হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এটা স্পষ্ট যে বন বিভাগের লোকজনের সহযোগিতা ছাড়া বন ধ্বংসের কাজটি করা সহজ নয়। এ ধরনের করাতকল অবৈধ হলেও এগুলোর বিরুদ্ধে বন বিভাগ কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়। প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী এই অবৈধ করাতকলগুলোর মালিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা মিলেমিশে একটি সমিতি গঠন করেছেন। চাঁদা তুলে বন বিভাগসহ স্থানীয় প্রশাসনের লোকজনকে উৎকোচ জোগানোই তাঁদের কাজ।
বন ধ্বংস ও গাছ চুরির এই উৎসব এখনই থামাতে হবে। অবৈধ এসব করাতকলের বিরুদ্ধে অবিলম্বে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে মালিকদের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে এই অবৈধ করাতকলগুলোকে দীর্ঘদিন ধরে যাঁরা অপকর্ম করতে সাহায্য করেছেন, সেই সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের চিহ্নিত করে তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।