ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষা

আরও একটি শিক্ষাবর্ষ এবং আরও একটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পেরিয়ে গেল ঠিকই, কিন্তু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের মাতৃভাষায় শিক্ষা দেওয়ার কোনো কূলকিনারা হলো না। ২০১৪ সালে লক্ষ্য পূরণের কথা থাকলেও ২০১৬-তেও তাদের জন্য পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। অথচ বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে ইতিমধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাদান চলছে এবং কিছু কিছু পাঠ্যপুস্তকও প্রণীত হয়েছে। মাতৃভাষার স্বীকৃতির জন্য লড়াইয়ের পথপ্রদর্শক বাংলাদেশের এ কেমন উদাসীনতা?
মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দাবি হলেও বাংলাদেশের সংবিধানে এ-বিষয়ক কোনো ধারা নেই। তবে জাতীয় শিক্ষানীতিতে মাতৃভাষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকারের কথা আছে। আদিবাসী ভাষাকে উন্নত করে সেসব ভাষায় শিক্ষার উপকরণ তৈরির কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন প্রকল্পের’ অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তির একটি ধারায় পাহাড়িদের মধ্যে মাতৃভাষায় শিক্ষার বন্দোবস্ত করার অঙ্গীকার করা হয়।
বাস্তবে এনসিটিবি থেকে দাবি করা হয়েছে, সমতলের ওঁরাও, মুন্ডা, মালো, মাহাতো প্রভৃতি গোষ্ঠীর জন্য সাদরি ভাষায় এবং পাহাড়ে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও গারো শিশুদের জন্য পাঠ্যবই তৈরির কাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন করা হয়েছে। কিন্তু স্পষ্ট নয় কেন এত দীর্ঘসূত্রতা? দুই বছর আগে লক্ষ্য পূরণের কথা থাকলেও তা কেন করা গেল না।
২০০৬ সালে ব্র্যাক পরিচালিত একটি গবেষণা জানাচ্ছে, বাংলাদেশে ৭৩টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভাষার মধ্যে চারটি ভাষা প্রায় বিলুপ্তির মুখে এবং বিপন্ন অবস্থায় আছে ৫০টি ভাষা। এই ভাষাগুলোকে টিকিয়ে রাখতে অন্তত প্রাথমিক পর্যায়ে মাতৃভাষায় শিক্ষার কার্যক্রম চালুর কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য পাঠ্যবই তৈরির পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিসমূহের ভাষা শিক্ষার জন্য তাদের থেকে যোগ্য শিক্ষকও তৈরি করতে হবে।