মালয়েশিয়ায় শ্রমিক নিয়োগ

মালয়েশিয়ায় ১৫ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ করা নিয়ে যা ঘটল, তা যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত, তেমনি সংশ্লিষ্টদের অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতারও নজির হিসেবে চিহ্নিত হবে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি মালয়েশীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ঢাকায় এসে এ ব্যাপারে যে সমঝোতা স্মারকটি সই করেছিলেন, গত শনিবার দেশটির মন্ত্রিসভা তা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই সিদ্ধান্ত অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। সমঝোতা স্মারক সইয়ের আগে আমরা কি যথেষ্ট খোঁজখবর নিয়ে দেখেছি যে সেখানে বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন কতটা গভীর? সেখানে অবস্থানরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে যাঁদের বৈধ কাগজপত্র নেই, তাঁরা বলেছিলেন, নতুন শ্রমিক নেওয়ার আগে তাঁদের বৈধ করা হোক। তাঁদের এ দাবিটি কি জনশক্তি মন্ত্রণালয় বিবেচনায় নিয়েছিল? মালয়েশিয়ায় বর্তমানে দেড় কোটি শ্রমিকের মধ্যে ২১ লাখ বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে আগামী পাঁচ বছরে ১৫ লাখ শ্রমিক নেওয়া বাস্তবসম্মত কি না, তা–ও খতিয়ে দেখা উচিত ছিল।
বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ নিয়ে শুরু থেকে মালয়েশীয় সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মধ্যে বিস্তর ফারাক লক্ষ করা গেছে। ২০০৯ সালে দেশটিতে বাংলাদেশি শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ থাকার পর ২০১২ সালে নতুন চুক্তি হলেও শ্রমিক নিয়েছিল মাত্র ৯ হাজার। এবার বাস্তবায়নের আগেই সমঝোতা স্মারক তারা বাতিল করে দিল, যা আমাদের জন্য অপমানজনক।
তবে মালয়েশীয় সরকারের এই আচরণের কথা মনে রেখেও যে কথাটি বলা প্রয়োজন তা হলো, এ ক্ষেত্রে আমাদের জনশক্তি মন্ত্রণালয় যে অদক্ষতা ও অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছে, তা অপূরণীয় ও অমার্জনীয়। অন্য দেশ সেটি যত বন্ধু বা ভ্রাতৃপ্রতিমই হোক না কেন, তাদের স্বার্থ দেখবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের জনশক্তি মন্ত্রণালয় কী করেছে? সবকিছু শেষ হওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত সচিব ‘আমরা এখন নিজেরা কথাবার্তা বলে পরবর্তী করণীয় ঠিক করব’ বলে যে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পুরো বিষয়টির সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।