জাবিতে র্যাগিংয়ের বর্বরতা

বিদ্যা ও সভ্যতা শিক্ষার পীঠস্থান যে বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে র‌্যাগিংয়ের নামে বর্বর, অরুচিকর সংস্কৃতি চলে কী করে? র‌্যাগিংয়ের সাম্প্রতিক শিরোনাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওপর প্রথম বর্ষ পেরোনো শিক্ষার্থীরা ‘আচরণ’ শেখানোর নামে যে শারীরিক, মানসিক ও ভাষিক নির্যাতন চালান, তা-ই র‌্যাগিংয়ের উপদ্রব হিসেবে বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এ কুপ্রথা বন্ধ না করার ব্যর্থতা সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এবং র‌্যাগিংয়ের পরোক্ষ উৎসাহদাতার ভূমিকায় থাকছে ক্যাম্পাস ও হল নিয়ন্ত্রণকারী ছাত্রলীগ। উচ্চশিক্ষার সদর দরজায় এ রকম নির্যাতনের সংস্কৃতি বন্ধ হওয়া জরুরি।
র‌্যাগিংয়ে অসুস্থ এক ছাত্র, প্রতিবাদে মানববন্ধনঅন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও চলছে প্রশাসনিক বিশৃঙ্খলা ও দখলদারির সংস্কৃতি। র‌্যাগিংয়ের ঘটনায় এর সবগুলো মাত্রাই প্রকাশিত হয়। নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য সিট বরাদ্দের বিষয়টি অনেক ক্ষেত্রেই হল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেই। একদিকে নতুন হল তৈরি না হওয়া, অন্যদিকে ছাত্রত্ব পেরোনো প্রভাবশালী ছাত্ররা হলের কক্ষ দখল করে থাকায় নতুন বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের অনেকেরই অতিথি কক্ষে কিংবা এক কক্ষে অনেককেই গাদাগাদি করে থাকতে হয়। এঁরাই সাধারণত র‌্যাগিংয়ের শিকার হয়।
‘আচরণ’ শেখানোর নামে নানান কসরত করানো, চড়-থাপড় মারা, একজনকে দিয়ে আরেকজনকে নির্যাতন, অশ্লীল কথা ও ভঙ্গি করতে বাধ্য করার মতো ঘটনা র‌্যাগিংয়ের গড়পড়তা চিত্র। এর মধ্যে গভীর রাতে নবীন ছাত্রদের দিয়ে মিছিল করিয়ে মেয়েদের হলের সামনে নারীবিদ্বেষী অশ্লীল স্লোগান দেওয়ানোর মতো কদাচার হলো নতুন সংযোজন। ক্ষেত্রবিশেষে প্রশাসনবহির্ভূত শিক্ষকেরা বাধা দিতে গিয়ে উল্টো হেনস্তার শিকারও হয়েছেন।
জাবিতে কার্যত হল চালানোর দায়িত্ব ছাত্রলীগের ওপর ছেড়ে দিয়েছে প্রশাসন। তারাই র‌্যাগিংয়ের পৃষ্ঠপোষকতা করে, হলে সিট দেয় বা কেড়ে নেয়। হাউস টিউটরদের এহেন ক্ষমতাহীনতার দায় অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকেই নিতে হবে। উপাচার্য উদ্যোগী হলে নিশ্চয়ই এ পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব। র‌্যাগিংয়ের নামে বর্বরতা বন্ধ হোক।