এ কোন বর্বরতা!

নোয়াখালীর হাতিয়ায় চাঁদা না পেয়ে এক নারীকে প্রকাশ্যে রাস্তায় গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়েছেন মো. শাহজাহান নামের এক ব্যক্তি। পেটানোর একপর্যায়ে ওই নারী রাস্তার পাশের গর্তে পড়ে গেলেও নিস্তার মেলেনি তাঁর। এলাকার লোকজনের কাছে থানার ‘দালাল’ হিসেবে পরিচিত শাহজাহান। 

গত সোমবার নোয়াখালীর হাতিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের চরকৈলাশ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই নারীকে পেটানোর সময় সেখানে উপস্থিত থাকা এক যুবক মুঠোফোনে পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করেন। সে ভিডিও প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত শুক্রবার শাহজাহানকে আসামি করে ওই নারী হাতিয়া থানায় মামলা করেন। তবে গতকাল শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ টি এম আরিচুল হক প্রথম আলোকে বলেন, শাহজাহানের পেছনে রয়েছেন হাতিয়া পৌরসভার মেয়র ইউছুফ আলী। তিনি তাঁকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছেন। এরপরও পুলিশ শাহজাহানকে গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে।
তবে ওসির বক্তব্যকে বিদ্বেষপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন হাতিয়ার পৌর মেয়র ইউছুফ আলী। তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহজাহানকে আমি কি মাথায় তুলে রেখেছি, পুলিশ তাঁকে ধরতে পারছে না।’
ওই নারী অভিযোগ করেন, শাহজাহানের পক্ষের লোকজনের চাপের কারণে তিনি দুদিন পর হাসপাতাল ছাড়তে বাধ্য হন। তাঁর অভিযোগ, শাহজাহান নানা অজুহাতে তাঁর কাছ থেকে একাধিকবার চাঁদা নিয়েছেন। কিছুদিন আগে তিনি ১৫ গন্ডা জমি কেনেন। এরপর তাঁর কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন শাহজাহান। তিনি চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন। এতে ক্ষিপ্ত হন শাহজাহান।
ওই নারী বলেন, সোমবার বিকেলে তিনি সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়ে উপজেলা সদরের ওছখালি বাজারের এক ব্যবসায়ীর কাছে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে শাহজাহান তাঁর পথরোধ করে গাছের ডাল দিয়ে পেটাতে থাকেন। তাঁর কাছে থাকা টাকা ও সোনার চেইন ছিনিয়ে নেন শাহজাহান।
ওই নারীর কাছে চাঁদা দাবি ও তাঁকে পিটিয়ে আহত করার বিষয়ে জানতে চাইলে মুঠোফোনে শাহজাহান প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন তাঁর স্কুলপড়ুয়া মেয়েকে এবং তাঁকে গালমন্দ করেন ওই নারী। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওই নারীকে প্রথমে দুটি কিল-ঘুষি, পরে গাছের ডাল দিয়ে দু-তিনবার আঘাত করেন। এটি তিনি ভুল করেছেন বলেও স্বীকার করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে শাহজাহান বলেন, ওই নারীর কাছ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা ও সোনার চেইন ছিনিয়ে নেওয়ার যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। তাঁর দাবি, তিনি থানায় দালালি নয়, মাঝেমধ্যে থানায় গিয়ে লোকজনের ফুটফরমায়েশ শোনেন। এটিকে কেউ দালালি বললে তাঁর কিছু করার নেই।
এ বিষয়ে হাতিয়া থানার ওসি এ টি এম আরিচুল হক বলেন, তিনি শাহজাহানকে চেনেন না। থানায় এখন কোনো দালাল নেই। আগে ছিল কি না, তা তাঁর জানা নেই।