বিপন্ন শিক্ষাজীবন

রাজনৈতিক সহিংসতায় মানুষের প্রাণহানি ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি জাতীয়ভাবে আরও একটি ক্ষেত্র ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যার প্রভাব হবে সুদূরপ্রসারী। বিরোধী জোটের হরতাল-অবরোধের কারণে দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় যে প্রায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে, তার ক্ষতি সম্ভবত কখনোই পূরণীয় নয়। আরও কত ক্ষেত্রে, কী মাত্রায় ক্ষয়ক্ষতি হলে আমাদের নেতৃবৃন্দের টনক নড়বে? জনস্বার্থের বিষয়টি তাঁদের বিবেচনায় স্থান পাবে?
এখন পরীক্ষার মৌসুম। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন কোটি ৭০ লাখ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা চলছে। মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোরও বার্ষিক পরীক্ষার সময় এটি। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থীরও বিভিন্ন পরীক্ষা চলছে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভর্তি পরীক্ষায়ও অংশ নিচ্ছেন বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। এই বিপুল জনগোষ্ঠী, যাদের সঠিকভাবে গড়ে ওঠার ওপর নির্ভর করছে জাতির ভবিষ্যৎ, তাদের সুবিধা-অসুবিধার দিকে বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ না করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দিনের পর দিন হরতাল-অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠছে তাদের সংকীর্ণ দলীয় স্বার্থবোধ; জনস্বার্থের প্রতি চরম অবহেলা।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে হয়তো তাদের স্বার্থটাই প্রধান। কিন্তু এভাবে পুরো জাতির শিক্ষাজীবনকে অচল করে দেওয়ার অধিকার যে তাদের নেই, সেটা বোঝা উচিত। কর্মসূচির দিনক্ষণ নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরীক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া জরুরি। সাধারণত দেখা যায়, কর্মসপ্তাহ শুরুর দিন থেকেই হরতাল কিংবা অবরোধ কর্মসূচি শুরু করা হয়; চলে তিন-চার দিন। এ কারণে পরীক্ষার্থীরা বিপদে পড়ে যায়। শিক্ষাঙ্গনকে রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে বলে ঘোষণা করা হলেও কার্যত সেটা অর্থহীন হয়ে পড়ে। কারণ, যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ও রাস্তাঘাটের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়া ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ। সরকারও এসব বিবেচনা করে পরীক্ষা স্থগিত করে। শিক্ষার্থীদের কচি মনে এসব অস্থিরতা-অনিশ্চয়তার ব্যাপক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়।
এটা বোধগম্য যে, রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষাব্যবস্থায় স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসা কঠিন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ক্ষতি যেন ন্যূনতম মাত্রায় থাকে, সে দিকে লক্ষ রেখেই কর্মসূচি দেওয়া উচিত। সবচেয়ে জরুরি প্রয়োজন সমঝোতার মাধ্যমে চলমান সংকটের অবসান ঘটিয়ে জনজীবনে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনা।