গভীর সমুদ্রের সম্পদ

ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা–সংক্রান্ত বিরোধ মিটিয়ে বাংলাদেশ একটি মাইলফলক অগ্রগতি নিশ্চিত করলেও জনগণ যে তার বাস্তব সুফল পাচ্ছিল না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আক্ষেপ সেই সত্যের ওপরই আলো ফেলেছে। মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধন করে বুধবার প্রধানমন্ত্রী গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকারে আগ্রহী ব্যক্তিদের সংখ্যাস্বল্পতা উল্লেখ করে সতর্ক করেন যে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মৎস্যসম্পদ আহরণ করা সম্ভব না হলে তা হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা আছে।
আমরা মনে করি, উদ্যোক্তারা যাতে এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসেন, সে জন্য সরকারকেই সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু আমরা যত দূর জানতে পারি যে, যথেষ্ট আন্তরিক ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রচেষ্টা চালিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে আমরা লড়াই করে সমুদ্র জয় করেছিলাম ঠিকই কিন্তু পরে সেই চেতনার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে দেখা যায়নি। আর দশটি প্রকল্প যেভাবে ঢিলেঢালাভাবে গ্রহণ ও তার থেকে বেশি মন্থর গতিতে বাস্তবায়ন করতে দেখা যায়, তেমন ধারার অনুসরণ বর্তমানে যা চলছে, তা বন্ধ করতে হবে।
সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে প্রচার-প্রচারণা, নিরাপত্তা এবং সব রকম রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হলে আমরা বিশ্বাস করি, এখানে বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে আসবেন। জাতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ সৃষ্টি আর সমুদ্র আমাদের জন্য এক অপার সম্ভাবনাময় গন্তব্য। এ ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বানের পরে মাত্র চারটি কোম্পানির অংশগ্রহণের তথ্য দুর্ভাগ্যজনক। কিন্তু সেটা মোটেই এই খাতকে একটি অলাভজনক খাত হিসেবে নির্দেশ করে না।
২০১২ সালে স্থলভাগতুল্য সমুদ্র পাওয়ার পরেও রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত জরিপ চালাতে পারেনি। ফলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও গভীর সমুদ্রে কী কী সম্পদ ও সম্ভাবনা রয়েছে, সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত পরিষ্কার ধারণা মেলেনি। সুতরাং শুধু
মৎস্য নয়, সব ধরনের সমুদ্র সম্পদ আহরণে রাষ্ট্রকে জরুরি ভিত্তিতে যথা প্রকল্প গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করতে হবে। নইলে মৎস্য নয়, তার থেকেও দামি সম্পদ আমরা হারাতে পারি।