
গত বছরের মে মাসের ঘটনা। রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড এলাকায় এক তরুণীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে ধর্ষণ করে পাঁচ যুবক। তরুণীটি নানাভাবে নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ওই পাঁচ যুবকের সঙ্গে তিনি পেরে ওঠেননি। অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয় ওই যুবকদের কাছে। কিন্তু যদি ওই তরুণী জুডো-কারাতে জানতেন, তাহলে হয়তো তাঁকে ধর্ষিত হতে হতো না। মার্শাল আর্টের কয়েকটা প্যাঁচেই তিনি কুপোকাত করতে পারতেন ওই পাঁচ যুবককে।
মার্শাল আর্ট হচ্ছে খালি হাতে আত্মরক্ষার কৌশল। জুডো, কুংফু, কারাতে, জুজুৎসু, তায়কোয়ান্দো—সবই মার্শাল আর্টের অন্তর্ভুক্ত। এর যেকোনো একটি শেখা মেয়েদের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে।
আমার এই লেখাটি যাঁরা পড়ছেন, তাঁদের মধ্যে নিশ্চয়ই মেয়েসন্তানের মা-বাবা রয়েছেন। আপনাদের বলছি, আপনারা আপনাদের মেয়েসন্তানটিকে কতই না ভালোবাসেন। কত স্বপ্নই না বোনেন তাকে নিয়ে। মেয়ে লেখাপড়া করবে, বড় হয়ে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, পাইলট, শিক্ষক—আরও কত কীই না হবে। মেয়েকে সর্বগুণে গুণান্বিত করার জন্য কত কিছুই না করেন আপনি। তাকে নাচ শেখান, গান শেখান, আঁকার স্কুলে ভর্তি করেন। অথচ আত্মরক্ষার কৌশল যদি তার না জানা থাকল, তাহলে এত কিছু করে কোনো লাভ হবে না। নাচ-গানের পাশাপাশি মেয়েদের মার্শাল আর্টও শেখান। মেয়েদের রুখে দাঁড়াতে শেখান।
আপনারা কি জানেন না এই সমাজে আপনার মেয়েটি কতটা অরক্ষিত! তার কোনো নিরাপত্তা নেই। সে যখন-তখন যেকোনো বখাটে যুবকের আক্রমণের শিকার হতে পারে, যেকোনো সময় হতে পারে ধর্ষণের শিকার, হতে পারে হত্যাকাণ্ডের শিকার। আপনি কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন, আপনার মেয়ের ক্ষেত্রে এর কোনোটিই ঘটবে না। আপনারা কি জানেন না আপনাদের মেয়েটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপদ নয়, কর্মস্থলে নিরাপদ নয়, এমনকি নিজ ঘরেও সে নিরাপদ নয়। মানুষরূপী একদল হায়েনা ওত পেতে আছে আপনার মেয়েকে তাদের শিকার বানানোর জন্য! রিসা, নিতু, খাদিজা, তনু কি পেরেছে নিজেদের রক্ষা করতে? পারেনি।
আপনারা গত কয়েক মাসের শুধু একটি পত্রিকার পাতাই খুলুন না। মেয়েরা ধর্ষণের শিকার হয়নি, উত্ত্যক্তের শিকার হয়নি, যৌন হয়রানির শিকার হয়নি এমন কোনো মাস কি খুঁজে পাওয়া যাবে? যাবে না।
তার মানে আমাদের দেশে মেয়েদের আসলেই কোনো নিরাপত্তা নেই। আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা, সমাজব্যবস্থা, আইনি ব্যবস্থা মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। মেয়েদের ওপর নিপীড়নকারীদের কোনো শাস্তি হতে দেখা যায় না। তাই তারা সমাজে বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আবারও একই ধরনের অপরাধ করে। কাজেই নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য শিখতে হবে খালি হাতে আত্মরক্ষার কৌশল। কুংফু, কারাতে, জুডো, জুজুৎসু, তায়কোয়ান্দোর যেকোনো একটি শিখতে পারে মেয়েরা। পাঠকদের অনেকের নিশ্চয়ই মনে আছে জাদুশিল্পী আজরা জ্যাবিনের কথা। ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়া এই নারী একবার কারাতের প্যাঁচ কষে একাই কয়েকজন ছিনতাইকারীকে শায়েস্তা করে খবরের শিরোনাম হয়েছিলেন।
সম্প্রতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হয়েছে ‘তায়কোয়ান্দো’ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের উদ্যোগে এই প্রশিক্ষণ চালু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুফিয়া কামাল হলেও শুরু হয়েছে মেয়েদের তায়কোয়ান্দো প্রশিক্ষণ। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন ভূমিকা রাখছে।
কাজেই আর দেরি নয়। এখনই আপনার মেয়েকে মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণের কোর্সে ভর্তি করুন। আপনি যদি সত্যিকার অর্থেই আপনার মেয়ের ভালো চান, তাহলে তাকে মার্শাল আর্ট শেখান। মেয়েদের নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এর কোনো বিকল্প নেই। জাতীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সসহ রাজধানীতে মার্শাল আর্ট শেখার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে। কিন্তু এগুলো যথেষ্ট নয়। আমরা চাই, সরকার দেশজুড়ে এ রকম প্রতিষ্ঠান আরও গড়ে তুলবে, যাতে প্রত্যন্ত এলাকার মেয়েরাও মার্শাল আর্ট শেখার সুযোগ পায়।
রোকেয়া রহমান: সাংবাদিক।