সব কাজে সব সময় নেক আমলের জন্য কষ্টসহিষ্ণুতা ও পাপ বর্জনের জন্য মানসিক দৃঢ় মনোবল অর্জনই রোজার মূল শিক্ষা বা লক্ষ্য। যদি কেউ রোজা পালন করেন; কিন্তু গুনাহ ছাড়তে না পারেন, তবে রোজার প্রকৃত সুফল তিনি পাবেন না। যাঁরা রমজান মাসেও নীতিনৈতিকতার ধার ধারেন না; অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অসামাজিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে জড়িত হন, তাঁরা রমজানের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত। কিছু মানুষ এমন আছে, যাঁরা রমজান মাসকে ব্যবসার উপলক্ষ হিসেবে গ্রহণ করেন। কিছু ব্যবসায়ী আছেন, যাঁরা রমজানে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য সারা বছর প্রস্তুতি নিতে থাকেন। আরও কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা রমজানের ঈদের রাতে কোথায় কোথায় ঘুরবেন এবং ঈদের দিন কোথায় কোথায় অযথা সময় কাটাবেন, সেই ছক কষতে থাকেন। ফলে পবিত্র ঈদের মহিমান্বিত ইবাদতের রজনীও মহামূল্যবান ঈদের রাতটিও অনর্থক হয়ে যায়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সম্পূর্ণ অনৈতিক। রোজা ও রমজানের শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
বৈধ অর্থ ও হালাল সম্পদ উপার্জন এবং হালাল খাদ্য গ্রহণ সব ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত। হালাল উপার্জিত সম্পদের সঙ্গে হারাম বা অবৈধ সম্পদ যুক্ত হলে পুরো সম্পদই অপবিত্র বা হারাম হয়ে যায়। হিসাবমতো জাকাত প্রদান না করলে সম্পদ পবিত্র হয় না। এ সম্পদ তার মালিকের জন্য হালাল থাকে না। যেসব ব্যবসায়ী রমজান মাসেও ব্যবসায় লেনদেনে মিথ্যার বা ছলচাতুরীর আশ্রয় নেন, খাদ্যে ভেজাল মেশান, ওজনে বা মাপে কম দেন, ১ নম্বর জিনিস বলে ২ বা ৩ নম্বর জিনিস ধরিয়ে দেন; কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করেন, তাঁদের আয়-উপার্জনও হালাল হবে না। উপার্জন হালাল না হলে তাঁদের রোজা ও নামাজও কবুল হবে না। তাঁরা রমজানের শিক্ষা ও দীক্ষা থেকেও বঞ্চিত থাকবেন। মহানবী (সা.) বলেন, ‘যে ধোঁকা দেয়, সে আমার উম্মত নয় (মুসলিম)।’
সব কাজে সব সময় নেক আমলের জন্য কষ্টসহিষ্ণুতা ও পাপ বর্জনের জন্য মানসিক দৃঢ় মনোবল অর্জনই রোজার মূল শিক্ষা বা লক্ষ্য। যদি কেউ রোজা পালন করেন; কিন্তু গুনাহ ছাড়তে না পারেন, তবে রোজার প্রকৃত সুফল তিনি পাবেন না। যাঁরা রমজান মাসেও নীতিনৈতিকতার ধার ধারেন না; অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অসামাজিক ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে জড়িত হন, তাঁরা রমজানের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।
ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের খেলাপ যেকোনো কাজ সব সময়ই নিষেধ; বরং তা রমজানের ইবাদতের মাসে আরও বেশি ক্ষতির কারণ। তাই রমজানে রোজা অবস্থায় কোনো ধরনের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের বরখেলাপ কোনো কাজ অবশ্যই নিষিদ্ধ ও অধিক নিন্দনীয়। অনেককে দেখা যায় রমজানে দিনের বেলায় যে গুনাহের কাজটি করছেন না, রাতের বেলায় অবলীলায় তা করছেন। এটি মূর্খতা ছাড়া কিছু নয়। এটাও নৈতিকতার বিরুদ্ধ। রোজার নৈতিক শিক্ষা হলো জীবনটাকে রোজার মতো সুনিয়ন্ত্রিত করা।
মানুষ জ্ঞান দ্বারা পরিচালিত হয়। জ্ঞানের উৎস হলো তথ্য, তথ্য লাভের বা জ্ঞানপ্রাপ্তির মাধ্যম হলো পঞ্চ ইন্দ্রিয়। পঞ্চ ইন্দ্রিয় তথা পাঁচটি অনুভূতি গ্রহণযন্ত্র হলো: চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিব, ত্বক। রমজানে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সঠিক সংযমী ব্যবহার নিশ্চিত করাই হলো নৈতিকতা। সঙ্গে সঙ্গে আজীবন এগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখার সক্ষমতা অর্জন করা হলো রোজার সফলতা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয় শ্রবণ, দর্শন ও কল্পনা-পরিকল্পনা এসব কিছু সম্পর্কেই (বিচারের দিনে) প্রশ্ন করা হবে (সুরা-১৭ বনি ইসরাইল, আয়াত: ৩৬)।’
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী
যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি; সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম